
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ২০০টি গ্রাম এখন প্লাবিত। এতে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে উত্তর শাহবাজপুর ইউপির আয়েশাবাদ চা বাগানে টিলা ধসে রাজন ব্যানার্জি (৬০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছেন। এ সময় চারজন আহত হন। এ ছাড়া বড়লেখা সদর ইউপির কেছরিগুল গ্রামে টিলা ধসে একজন আহত হয়েছেন। পুরো জেলার মধ্যে বন্যায় বড়লেখা উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ জানান, আয়েশাবাগ চা বাগানে শনিবার সকালে টিলা ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় চারজন আহত হন। টিলার পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পৌরশহরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি উঠেছে। উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। এ ছাড়া পানিতে চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ, ভেসেছে পুকুরের মাছ।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি সভা করেন। এ সময় তিনি জনদুর্ভোগ লাগবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন।
বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা পৌরসভার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। প্রায় আড়াই হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। শহর থেকে পানি নেমে গেলেও পৌরসভার নিচু এলাকা এখনো পানিতে নিমজ্জিত। পৌর শহরের প্রায় সব কটি দোকানে পানি ওঠায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা হয়নি।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, বড়লেখায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও টিলা ধস প্রতিরোধে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ২১টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ আমরা পানিবন্দি এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেছি।
পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম এমাজ উদ্দিন সরদার বলেন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশন পানিতে নিমজ্জিত ছিল। পানি এখন নেমেছে। তবে ভারি বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে ২০টি বড় গাছ পড়ে গেছে, ১৮টি স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়েছে, ২২টি স্থানের কোথাও পল্লী বিদ্যুতের পোল ভেঙে গেছে, কোথাও হেলে পড়েছে ও আবার কোথাও পড়েও গেছে। এ ছাড়া ১৬টি ইন্সুলেটর ও ৮টি ক্রস আর্ম ভেঙে গেছে, ১২টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে এবং ২১ কিলোমিটার লাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। পল্লীবিদ্যুতের লোকজন লাইন মেরামতে কাজ করছেন। পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম মোল্লা বলেন, ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তলিয়ে গিয়েছিল। আমাদের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে পানি উঠেছিল। আজ ভোরে পানি নেমে গেছে। তবে ভারি বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সর্বাতিক ভাবে প্রস্তুত রয়েছি।