মো. রাসেল ইসলাম,যশোর জেলা প্রতিনিধি: বছরটিতে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ৪১০০ কোটি টাকা। তবে রাজস্ব আয়ে এমন ধস নামলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন, পিছনের বছরের চেয়ে এবছর রাজস্ব আয়ের গ্রোথ অনেক বেশি।
এদিকে, করোনার কারণে গেল দুই বছর রাজস্ব আয়ে ধস নেমেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এমন মন্তব্য করলেও পর পর গত ৮ থেকে ৯ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছেন। এক্ষেত্রে শুল্কফাঁকি দিয়ে পণ্য আমদানি এবং বন্দরের নানান অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
এর আগেও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ১১৪৫ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ তে ঘাটতি ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, এবং ২০১৬-১৭ তে বেশি আদায় হয়েছিল ৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি ২০৩ কোটি টাকা,২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ তে ঘাটতি ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ২০১২-১৩ তে ঘাটতি ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি পরিমাণ ছিল ১৯৪ কোটি টাকা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, গেল দুই বছর করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা ভারতে যেতে না পেরে চাহিদা মত পণ্য আমদানি করতে পারেননি। এতে রাজস্ব আয় ব্যহত হয়েছে। তবে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে সকল অবকাঠামো বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমস হাউজে থাকার কথা তা অনেকটা নাই। এতে লোকশানের কবলে পড়ে অনেকে এপথে বাণিজ্য বন্ধ করেছেন। এটাও বেনাপোল বন্দরে কয়েক বছর ধরে রাজস্ব ঘাটতির কারণ।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল কাস্টমসে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নাই। এতে খুলনা ও ঢাকা থেকে পরীক্ষা করাতে মাসের অধিক সময় লেগে যায়। ফলে যেমন প্রচুর সময় অপচয় হয় তেমনি বন্দরে আটকে থাকা পণ্যে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বেনাপোল কাস্টমস হাউজে বিএসটি আই ও বিএসআইরের শাখা স্থাপনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে রাজস্ব আয় কমার ক্ষেত্রে এটিও একটি বড় কারণ মন্তব্য করেন এ ব্যবসায়ী।
আমদানি কারক পিয়াস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বেনাপোল বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে থাকে। তবে বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক না। আমদানিকারকদের নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে বন্দরে পণ্য পাহারা দিতে হয়। বন্দর থেকে পণ্য চুরি, বারবার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা বন্ধ করেছেন।
এছাড়া এ বন্দর দিয়ে বৈধ পথে মাদক দ্রব্য প্রবেশ বেড়ে যাওয়ায় ঝামেলা এড়াতে ভদ্র ব্যবসায়ীরা অনেকে অন্য বন্দরে চলে গেছেন। এসব কারণে পর পর ৮ থেকে ৯ বছর ধরে এ বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চাহিদা মত রাজস্ব আহরণ করতে পারছেন না বলেও মনে করেন তিনি।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল কবীর ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের বিপরীতে ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা ঘাটতির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, করোনার বিরূপ প্রভাবে এত বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ কমলেও রাজস্ব আহরণের গ্রোথ ছিল বেশি। সঠিক নিয়মে রাজস্ব আহরণে সক্রিয় হয়ে কাজ করছেন কাস্টমস সদস্যরা। যারা অনিয়ম করার চেষ্টা করেছেন তাদের জরিমানা, লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে ইতিমধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পণ্যগারের জন্য জমি অধিগ্রহণ, নতুন পণ্যগার নির্মাণ ও বন্দর এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে আরও জমি অধিগ্রহণ ও পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলমান বলেও জানান তিনি।