নামের মিলে ভুল ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়েছেন পটুয়াখালীর আদালত। পাশাপাশি একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে হেনস্থা করার জন্য যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ দুপুর ১২ টায় পটুয়াখালীর প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আবুল বাসার মিয়ার আদালতে ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের মুক্তি চেয়ে তার পক্ষে অ্যাডভোকেট এটিএম মোজাম্মেল হোসেন তপন হাবিবুর রহমানের সাথে সংঘঠিত অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলে বিকাল সোয়া চারটায় এ রায় ঘোষণা করেন বিজ্ঞ বিচারক আবুল বাসার মিয়া। রায়ে সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামি নাহার গার্মেন্টস এর মালিক হাবিবুর রহমানকে জেলখানায় প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এর আগে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গলাচিপা থানার এএসআই আলামিনকে ওই থানা থেকে ক্লোজড করে পটুয়াখালী পুলিশ লাইনে আনা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গলাচিপা থানার ওসি মোঃ মনির হোসেন।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গলাচিপা পৌর শহরের মুজিব নগর রোডের নূর মোহাম্মাদ মাস্টারের ছেলে ও গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্টসের মালিক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ব্র্যাক থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সে সময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের (হিসাব নম্বর ২২০০) ঋণের সমপরিমাণ অর্থের একটি চেক জমা দেন। কিন্তু, তিনি ওই ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমাকৃত চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ওই ব্যাংকে জমা দিলে তাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ডিজঅনার হয়।
পরে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২ মে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। কিন্তু, তিনি ব্র্যাক থেকে ঋণ নেননি মর্মে ওই বছরের ১৬ জুন লিখিতভাবে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমানের বিরদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পটুয়াখালীর বিজ্ঞ যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রায় দেন। রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ, অর্থাৎ দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা দণ্ডের আদেশ দেন। রায়ের দিন ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুযায়ী গলাচিপা থানার সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় গলাচিপা বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর দুপুরে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে এবং ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠায়। কারাগারে পাঠানো হাবিবুর রহমানের পিতার নাম নূর মোহাম্মাদ পন্ডিত।
এদিকে প্রকৃত ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান প্রায় পাঁচ বছর আগে গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোড থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে মহিলা কলেজ সড়কে নতুন করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। তিনি ব্যবসার ধরন পাল্টে এখন মুদি-মনোহরির ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে কারাগারে পাঠানো হাবিবুর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ‘হাবিবুর কোনোদিন ব্যবসা করেননি, কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও নেইনি। তার দুই ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে এবং তারা বাবা, মায়ের ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি মাসে যে টাকা দেয়, তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী গলাচিপায় বসবাস করে। পুলিশকে বিষয়টি বলা হয়েছিল কিন্তু, তারা শোনেনি।’
এ দিকে নিরাপরাধ বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে জেলে পাঠানোর পর তার সন্তানরা ঢাকা থেকে পটুয়াখালীতে এসে কোর্টের কাগজ পত্র উঠানোর পর দেখেন শুধু মাত্র নামের মিল থাকার কারণে অন্য লোকের পরিবর্তে তাদের বাবাকে কারাগারে পাঠিয়েছে গলাচিপা পুলিশ। পরবর্তিতে তারা কাগজপত্র নিয়ে গলাচিপা থানায় গেলে প্রকৃত বিষয়টি উন্মোচিত হয়।
এদিকে গতকাল যমুনাটিভি ও যমুনা অনলাইনে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর উপরের নির্দেশে বিষয়টি ভুল স্বীকার করে আদালতে আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। অপর দিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।