বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসরদের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি না থাকলে দেশ গত তেরো বছরে আরও অনেক এগিয়ে যেতো বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
রবিবার (৯ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) টিএসসি সড়ক দ্বীপে পোস্টার সাংস্কৃতিক সংসদ ও বজ্রকণ্ঠের আয়োজিত দিন বদলের মেলায় উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, গত তের বছরে দেশ আরও অনেক এগিয়ে যেতে পারত যদি বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসরদের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি না থাকত, যদি তাদের পেট্রল বোমার রাজনীতি না থাকত, মানুষ হত্যার রাজনীতি যদি না থাকত এবং দিনের পর দিন মানুষকে অবরোধের নামে অবরুদ্ধ করে রাখার রাজনীতি না থাকত এবং দেশের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালানোর অপরাজনীতি যদি তারা না করত। আমরা দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে চাই। সেই স্বপ্নের ঠিকানা হচ্ছে ২০৩১ সাল নাগাদ দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা। ২০৪১ সাল নাগাদ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রচনা করতে চাই। সেটি করতে হলে এই অপরাজনীতির অবসান হতে হবে। যারা অপরাজনীতি করেন তাদের পতন হতে হবে। অন্যথায়, আমরা স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারব না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দিন বদলে গেছে। দিন বদলের কথা বলে আমরা ২০০৮ সালে মানুষের সামনে রূপকল্প উপস্থাপন করেছিলাম। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে দিন বদলের রূপকল্প উপস্থাপন করেছিলাম এবং শ্লোগান দিয়েছিলাম। আজকের দৃশ্যের সঙ্গে তেরো বছর আগের দৃশ্য যদি আমরা মিলাই, তাহলে দেখতে পাবো—দিন বদল হয়েছে।
দিন বদলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নব্বই দশকে শ্লোগান ছিল শ্রমিকের মজুরি হতে হবে সাড়ে তিন কেজি চালের মূল্যের সমান। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকের মজুরি এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, শ্রমিক একদিনের মজুরি দিয়ে ১২-১৩ কেজি চাল কিনতে পারে। অর্থাৎ দিন বদল হয়েছে। আমরা একসময় দাবি করতাম যেন মোটা কাপড় পরতে, মোটা চাল খেতে পারি। এখন রিকশাওয়ালাও মোটা চাল খায় না, মোটা চাল এখন গরুকে খাওয়ানো হয়। বাংলাদেশে এখন আর কুঁড়ে ঘর নেই, এখন আকাশ থেকেও কুঁড়েঘর দেখা যায় না। কবিতার কুঁড়েঘর শুধু কবিতায় আছে। আজ সেই কুঁড়েঘরে লাকড়ি, গরু রাখা হয় কিন্তু মানুষ থাকে না।”
মেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, দিন বদলের পর্বটি শুরু হয়েছিলো দুই ধাপে। প্রথম ধাপে জাতির পিতার নেতৃত্বে ১৯৭২-৭৫ পর্যন্ত। তখনই মূলত সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের দিন বদলের অনেকগুলো বীজ উপ্ত করলেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট একটি কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটলো। তারপরে স্থবিরতা চলে আসে। দিন বদলের আরেকটি বীজ উপ্ত হয়েছিল ১৭ মে ১৯৮১, যেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অনেক বাধাবিপত্তি মাথায় নিয়ে দেশে ফেরেন। আজকে যে বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি, যে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল, সেটা সম্ভব হতো না, যদি না বঙ্গবন্ধুকন্যা সেদিন দেশে ফেরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গ্রহণ না করতেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে একটি বড় কাজ হলো ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। সেটি শুধু সরকার করতে পারে না। সেটি করতে পারে সবাই মিলে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, মেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকার আলী আজগরসহ আরও অনেকে।