এনামুল হক রাশেদী, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১১টি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ১৮ পরিবারের নগদ টাকা, স্বর্নালঙ্কার, আসবাব পত্র সহ মুল্যবান গৃহসামগ্রীসহ প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা।
১৯ জানুয়ারি’২২ ইং বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টার সময় উপজেলার শিলকূপ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব-মনকিচর মোহাব্বত আলী পাড়া হরন্নিছা বাপের বাড়িতে ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডে ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১১ বসতঘরের সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৮ পরিবার। এতে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় একদিকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বৃদ্ধ, নারী, শিশুসহ সকল সদস্যরা মাঘের কনকনে এ শীতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে, অন্যদিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিমিষেই তিলে তিলে গড়ে তোলা সুখের সংসারের শখের সবকিছু হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেছে। অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো হল- মৃত কুইল্যা মিয়ার পুত্র ফজল কাদের, আব্দুল মালেক, আব্দুল মোনাফ, আব্দুল মোনাফের ছেলে মু. আলমগীর, জাহাঙ্গির আলম, মৃত চাঁন মিয়ার পুত্র আব্দুল জলিল, লেদু মিয়া, লেদু মিয়ার পুত্র জাকের উল্লাহ্, শফি উল্লাহ্, মৃত ঠান্ডা মিয়ার পুত্র আনু মিয়া, সুফি আলম, মাহাবুব আলম, আনু মিয়ার পুত্র ইছহাক, কামালের পুত্র মুহাম্মদ আক্কাস, মৃত আঞ্জু মিয়ার পুত্র মুহাম্মদ হারুণ, মমতাজ বেগম, ইসলাম মিয়া।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী শাহ্ আলমের রান্না ঘরের লাকড়ির চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে আগুনের লেলিহান শিখা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে চতুর্থদিকে।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ আব্দুর রহিম বলেন, “অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে দ্রুত আমাদের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছান। আমাদের ফায়ার টিম ও এলাকাবাসীদের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রনে আসার পুর্বেই অগ্নিকান্ডের এ ঘটনায় ১১ টি বসতঘরের সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে মানবিক সহযোগিতা নিয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছুঠে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাইদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারে নগদ আর্থিক সহযোগীতা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।
অগ্নিকান্ডের খবর পাওয়ার সাথে সাথে মানবিক সাহায্যসহ এগিয়ে আসেন, বাঁশখালীর অন্যতম শিল্প পরিবার মাস্টার নজির আহামদ ট্রাস্ট। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেক পরিবারে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা চাল এবং ২ বান করে ঢেউটিন প্রদান করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, শিল্কুপ ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক সিকদার, দেলোয়ার হোসেন, আজগর হোসেন, সোহেল, মোরশেদ প্রমুখঃ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শিলকূপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মহসিন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে নগদ ২১ হাজার টাকা প্রদান করেন।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দরিদ্র্য পরিবারের মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকা, কারো ছেলের বিদেশ যাওয়ার জন্য জমানো টাকা ও পাসপোর্ট, কারো বেড়ার ঘর ভেঙ্গে নতুন স্বপ্নের ঘর নির্মানের জমানো টাকা, কারো ছেলের প্রবাস থেকে পাঠানো টাকা, সদ্যবিবাহিত কিছু পরিবারের বউ-ঝি’দের স্বর্ণালংকার পুড়ে শেষ হয়ে গেছে সবকিছুই। আগুনের লেলিহান শিখার ভয়াবহতা এত তীব্র ছিল যে তা নিয়ন্ত্রণ দুঃসাধ্য ছিল। কালো ধোঁয়ায় এতটাই আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল যে, কোন রকম জীবনটা বাঁচানো গেলেও বাঁচানো যায়নি তাদের সঞ্চিত অর্থ, বেঁচে থাকার পাথেয়। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর বেশীরভাগই হতদরিদ্র। দিনে আনে দিনে খায়। কেউ মাঠে কাজ করে, কেউ ছোট্ট ব্যবসায়ী, কেউ বর্গাচাষী। এখন নেই বলতে কিছুই নেই। খোলা আকাশের নীচেই হবে ঠাঁই। ফায়ার সার্ভিস তাৎক্ষনিকভাবে তৎপর না হলে ক্ষয়-ক্ষতি আরো ভয়াবহ হতে পারত বলে স্থানীয়দের অভিমত। মানবিক এ বিপর্যয়ে ফায়ার সার্ভিসের আন্তরিক দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করেছে সর্বস্তরের জনগন।