বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত তিন দিন ধরে পানি না থাকায় মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। একইভাবে পানি সংকটে ভুগছেন সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক থেকে শুরু করে ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কেউ পানি ক্রয় করে কেউ বা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে প্রতিদিনের জরুরি কাজ সারছেন। হাসপাতালে মাঝে মধ্যে পানি মিললেও তা ঘোলা ও লবণযুক্ত হওয়ায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
হাসপাতালে প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে এক হাজার থেকে ১১০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। একজন রোগীর সঙ্গে গড়ে দুইজন করে স্বজন থাকছেন। এছাড়া প্রতিদিন চার-পাঁচশ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের সঙ্গেও একইভাবে থাকছেন স্বজন। আর চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে আছেন চার-পাঁচশ কর্মকর্তা, চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, কর্মচারী। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ভর্তিকৃত রোগীরা। তাদের গোসল থেকে শুরু করে, কাপড় ধোয়া, টয়লেট সারা এবং খাবার পানি নিয়ে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি না থাকায় টয়লেটের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিতদের টয়লেট থেকে শুরু করে খাবার পানি এবং প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র পরিষ্কার করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
রোগী ও স্বজনরা জানান, ররিবার (১৬ আগস্ট) রাত থেকে আকস্মিকভাবে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। নার্স, বয়, কর্মচারীদের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে কোনও উত্তর মেলেনি। সবার একই কথা পানি এসে যাবে। এভাবে তিনদিন চলে যাচ্ছে কিন্তু পানি নেই। পানির কল খুললে ঘোলা ও লবণযুক্ত পানি পড়ছে। যা টয়লেটেও ব্যবহারের অনুপযোগী। যার ফলে এখন খাবার পানি ক্রয় আর ব্যবহারের পানি হাসপাতাল এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বোতলে করে আনতে হচ্ছে।
মেডিক্যালের দায়িত্বরত গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সেলিম তালুকদার বলেন, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে নার্সিং হোস্টেল ও ডাক্তার কোয়ার্টারে ১৯৬৮ সালে স্থাপিত দুটি টিউবওয়েল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে হাসপাতালের ওভারহেড টাংকিতে রিজার্ভ করা হয়। পরে সেই পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হয়। টিউবওয়েল দুটি পুরনো হওয়ায় লবণযুক্ত ঘোলাটে পানি আসছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, গণপূর্তকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও তারা নানা অজুহাত দেখায়। এত বড় একটি হাসপাতালে ব্যাকআপ রাখা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা সেটি করেনি। ব্যাকআপ পানির ব্যবস্থাসহ দ্রুত পানির সমস্যা সমাধানে গণপূর্তকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, হাসপাতালের পরিচালক পানি সংকটের বিষয়টি জানানোর পর সার্ভে করে টিউবওয়েল সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের জন্য নতুন একটি টিউবওয়েল স্থাপনে ৬২ লাখ টাকার একটি প্রাক্কলন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নতুন টিউবয়েল স্থাপন সম্ভব হবে। পানি না থাকলে বিকল্প বিষয়টিও আমাদের পরিকল্পনায় আছে।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন