তিমির বনিক, মৌলভীবাজার থেকে: জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়ায় দূর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত মৃত্যু হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর। বনের ভেতর বিদ্যুৎ লাইন, সড়কপথ- রেলপথের কারণে বারবার বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হলেও মৃত্যু ঠেকাতে পারছে না বনবিভাগ। পরিবেশ কর্মী ও বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাণ প্রকৃতিও বৈচিত্র্য রক্ষায় বাঁচাতে হবে বন।
এছাড়া লাউয়াছড়া সহ মৌলভীবাজার জেলার অন্যান্য বন পাহাড় টিলা এবং হাওরে অবাধে নিধন করা হচ্ছে গাছ। ফলে ধ্বংস হচ্ছে বন, হুমকির মুখে বন্যপ্রাণী এবং প্রকৃতি হারাচ্ছে তার নিজস্ব ভারসাম্য। গত ৩ মার্চ লাউয়াছড়া বনের ভেতর বনবিভাগ যখন বিশ্ব বন্যপ্রাণি দিবসের নানা কর্মসূচি পালন করছিলেন, ওই দিনই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রাণ গেলো দুটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণির। বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায় চশমা পড়া হনুমান ও দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় উল্টো লেজি বানর। চশমা পড়া হনুমানটি দুদিনের বাচ্চা রেখে মারা যায়। পরে মা হারা বাচ্চাটিকেও বাঁচানো যায়নি। জাতীয় লাউয়াছড়া উদ্যানে এক বছরে প্রাণ গেছে লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া ও চশমাপরা হনুমান সহ ১০ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর।
মৌলভীবাজার বনবিভাগ বলছে সংরক্ষিত বনের ভেতর ৩৩ হাজার ফুটের খোলা তারের পল্লিবিদ্যুৎ এর লাইন। এসব তারে ঝুলতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মারা যাচ্ছে এসব প্রাণ বনবিভাগ বলছে, জাতীয় উদ্যানের ভিতর ১০ কিলোমিটার এবং সংলগ্ন এলাকার ৩০ কিলোমিটার জুড়ে বিদ্যুৎ এর এমন খোলা তার। পুরো বনে ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ স্পর্শে মারা যাচ্ছে বন ও প্রানী।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কর্মী কাজল হাজরা জানান- লাউয়াছড়া একটা পরিপূর্ণ সমৃদ্ধ বন। বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর বসবাস এখানে। অথচ বিদ্যুৎ এর তার, রেল ও সড়কপথে প্রায়ই বন্য প্রাণী মারা যাচ্ছে। গাছ কাটার ফলে বিলীন হয়ে পরছে বন্য প্রাণীর বনের নিজস্ব সত্তা, গাছ বিলীন হবার ফলে দেখা দিচ্ছে বনে খাদ্য সংকট রয়েছে। ফলে বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ এই আবাসস্থল হুমকির মুখে পড়েছে।
মৌলভীবাজার বাপা সমন্বয়ক আসম সালেহ সোহেল বলেন, বন যারা চালান তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। সম্প্রতি জুড়ি উপজেলায় প্রায় ১ কি: মি: আগুন লাগিয়ে বনের পাতা পুরানো হয়েছে, এতে করে জীববৈচিত্র্যের চরম ক্ষতি সাধিত। মৌলভীবাজারে জাতীয় লাউয়াছড়া উদ্যান, রাজকান্দি ফরেস্ট, পাথারিয়া বন উল্লেখযোগ্য।এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও বন্যপ্রাণীর জন্য নিরাপদ করতে পারছে না সরকার অথচ হাজার কোটি ব্যায়ে সাফারি পার্ক তৈরি হচ্ছে। আমরা চাই প্রকল্প গ্রহণ করা হোক বন ও বন্যপ্রাণীর রক্ষার স্বার্থে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৯ প্রজাতির সাপ, ১৮ প্রজাতির টিকটিকি, ২ প্রজাতির কচ্ছপ, ৫৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ২২ প্রজাতির উভচর সহ অনেক বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি আসার আগে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে মৌখিক ও লিখিত জানানো হয়েছে। আমি আসার পর ও চিঠি দিয়েছি, মৌখিক বলেছি, কিন্তু কোন কাজ হয় নাই। এই বিদ্যুৎ এর লাইনগুলোকে রাবার প্রটেক্ট করে দিলে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে আসবে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জানানো হলে সেখান থেকে নির্দেশনা এসেছে তার ঢেকে দেওয়ার জন্য। এর পাশাপাশি গাছ কাটা রোধে পদক্ষেপ নিচ্ছি। যারা গাছ কাটার সাথে জড়িত, ইতিমধ্যে অনেককে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে এবং বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সকল রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার।