ঢাকায় পুনরায় দূতাবাস খোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা; ফেব্রুয়ারির শেষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়েগো কাফিরো’র সফরে তা উদ্বোধনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
ঢাকায় দূতাবাস খোলার বিষয়ে আর্জেন্টিনা নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে জানিয়ে সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষে ঢাকা সফরে আসবেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
“আমরা সেটার অপেক্ষায় আছি, উনাকে অভ্যর্থনা জানাব। উনারা যদি এখানে মিশন বা কনস্যুলার অফিস খুলতে চান, সেটা প্লাস প্লাস।”
২৬ ফেব্রুয়ারি দুদিনের সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়েগো কাফিরো ঢাকায় আসবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে আর্জেন্টিনার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশ; এরপর ঢাকায় দেশটির দূতাবাস খোলা হলেও ১৯৭৮ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অন্যান্য সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গতবছরই ঢাকায় দূতাবাস খোলার ঘোষণা দেয় আর্জেন্টিনা।
ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনার মধ্যে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাফিরো।
ওই সময় আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাণিজ্যিক কৌশল উন্নয়নের অংশ হিসাবে রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশে পুনরায় দূতাবাস খোলার প্রকল্প নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাফিরো।
ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২১ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে আর্জেন্টিনা। এসব পণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল, ময়দা, ভুট্টা ও গম রয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনায় পণ্য গেছে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের।
ডিসেম্বরে লিওনেল মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা দলের ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের পর অভিনন্দন জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই চিঠির উত্তরে লেখা চিঠিতে ২০২৩ সালে ঢাকায় দূতাবাস খোলার পরিকল্পনার কথা পুনরায় ব্যক্ত করেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ।
গত ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের বৈঠকে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানানোর কথা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “এখন আসবেন উনি; আমি দাওয়াত দিয়েছিলাম আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
“মেসির জয়লাভের পরে, বলছিলাম বাংলাদেশের মানুষ তাকে অনেক পছন্দ করে, তাকে নিয়ে আসেন, এসে আমাদের এখানে একটা ইভেন্ট করেন। তিনি আসতে রাজি হয়েছেন।”
স্বাধীনতার সময় থেকে আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, “আর্জেন্টিনার সাথে আমরা চাই ভালো সম্পর্ক। আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল, ওখানে একটা মিশন খোলার, আমরা ব্রাজিলে খুলেছি, আমরা আগামীতে মিশন খুলতে পারব, ডিপেন্ডিং অন টাকাপয়সা… এসব নিয়ে।”
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে আর্জেন্টাইন লেখক ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো’র ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাসও পুনরায় চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো দেশে নতুন মিশন খোলার ক্ষেত্রে প্রবাসী বাঙালিদের সংখ্যা, বাংলাদেশের কাছে সে দেশের গুরুত্ব এবং রেমিটেন্স প্রবাহের দিক বিবেচনায় নেয় সরকার।
“আমরা ইনশাআল্লাহ আর্জেন্টিনায় আগামীতে কোনো এক সময় মিশন খুলতে পারব।”