নির্বাচনে সহায়তা করার উপহার হিসেবে সাধারণ মানুষের রপ্ত হওয়া বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের সরকার বিদেশ পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আবহমানকাল ধরেই উল্লিখিত বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের রপ্ত। অথচ সেসব বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানোয় একটি প্রবাদ মনে পড়ে যায়- ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’। মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে ফালতু কাজে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানো মূলত মিডনাইট নির্বাচনে সহায়তা করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের উপঢৌকন দেয়া।’
পুকুর খনন, মাছ চাষসহ নানা বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানো নিয়ে নানা সময় সমালোচনা হয়েছে। এবার সামনে এসেছে খিচুড়ি রান্নার প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাবের বিষয়টি।
রিজভী বলেন, ‘একটি সংবাদের প্রতি আপনাদের (সাংবাদিক) দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। খিচুড়ি রান্না প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানো হচ্ছে। ইতিপূর্বে পুকুর খননের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানো হয়েছিল। এছাড়াও পাবদা মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নিতে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে গিয়েছিলেন। এসব অভিনব ও হাস্যকর তামাশা কেবল শেখ হাসিনার আমলেই সম্ভব।’
৮২ হাজার করোনা রোগীর তালিকা ডাটাবেজে নেই
সরকারের ডাটাবেজে ৮২ হাজার করোনা রোগী অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেন রিজভী। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গত দুদিন আগে বলেছেন-‘বিএনপি চিরাচরিত মিথ্যাচার করছে। বিএনপি বলেছে, সরকার করোনা রোগীদের পরিসংখ্যানে ৮২ হাজার রোগীর নাম বাদ দিয়েছে।’ তিনি ৮২ হাজার রোগীর তথ্য ও তালিকা জানতে চেয়েছেন। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ‘বানোয়াট এবং অসত্য কথা বলার ফেরিওয়ালা আপনারা।’
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে রিজভী আরও বলেন, ‘আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, গত ১১ সেপ্টেম্বর বহুল প্রচারিত ‘নিউ এজ’ ইংরেজি পত্রিকাটির প্রধান শিরোনাম দেখুন। ৮২ হাজার নয়, ৮৪ হাজার করোনা রোগী সরকারের ডাটাবেজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ডিজি হেলথ সার্ভিস কি সরকারি নাকি বিরোধী দলীয় প্রতিষ্ঠান? এটি প্রত্যক্ষভাবে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের ডাটাবেজ থেকে ৮৪ হাজার রোগীর নাম হারিয়ে গেল কীভাবে? এই তথ্যটি এমন একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যেটি জনগণের নিকট বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যম। এই সংবাদ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারি ডাটাবেজে এলাকাভিত্তিক করোনার সংখ্যা ও সংক্রমণের হারেরও তেমন তথ্য নেই। এখন আমি বলতে চাই, উল্লিখিত পত্রিকাটি পাঠ করে ওবায়দুল কাদের সাহেবের নিজের আত্মমর্যাদার কথা চিন্তা করে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। জনসম্মুখে ডাহা মিথ্যা কথা বলার পর একজন মন্ত্রীর কোনক্রমেই দায়িত্বে থাকা তার মর্যাদার সাথে বেমানান।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘সরকার শুরু থেকেই করোনা রোগীর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। জাতির সামনে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না। করোনার টেস্ট কমিয়ে দিয়ে ‘করোনা রোগী নেই’ বলে জনগণকে ধাপ্পা দিয়ে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এই ধাপ্পাবাজির উদ্দেশ্য হচ্ছে করোনা থেকে জনদৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে রাখা।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য একরামুল হক বিপ্লব, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুর রহমান ও মোরশেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।