তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শমসেরনগরে চলন্ত আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেসে আগুন লাগার ঘটনা তদন্তের নেই কোন গতি। এই ঘটনায় গঠিত রেলওয়ের দুটি তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্য প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার ১৯ দিন পার হয়ে ২০ দিনে পড়লো এখনো তারা প্রতিবেদন জমা দেননি। জানা গেছে সরকারের মন্ত্রীরা ঘটনার পর ‘এটি নাশকতা’ এমন মন্তব্য করার পর পরই তদন্তের গতি মন্থর হয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থলের কাছাকাছি শমসেরনগর বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, সিনিয়র মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যের পর তদন্ত কমিটির সদস্যরা মূল বিষয়ের পরিবর্তে আশপাশের বাজারে কারা কারা খোলা তেলের (পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন ও কেরোসিন) ব্যবসা করেন এই তথ্যও সংগ্রহ করতে দেখা যায়।
গত ১১ জুন ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন মনু ও শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি পৌঁছলে চলন্ত ট্রেনের পাওয়ার কারে আগুন লাগে। ঘটনার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগীয় মহা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগীয় চিপ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অজয় কুমার পোদ্দারকে প্রধান করে একটি জোনাল কমিটি এবং প্রধান পরিবহন কর্মকর্তাকে প্রধান করে পৃথক একটি বিভাগীয় কমিটি গঠন করে ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন। গঠিত কমিটি পরদিন ১২ জুন তদন্ত কাজ শুরু করে কমিটি।
কমিটির সদস্যরা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অবস্থান করে কয়েক দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তারা কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অবস্থান করে স্থানীয় প্রকৌশলী ও ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং অনেক যাত্রীর বক্তব্যও নেন। পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া পাওয়ার কার ও বগি দুটি দেখে আলামত সংগ্রহ করেন। কিন্তু অদ্যাবধি এই ঘটনায় কোনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের চিপ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অজয় কুমার পোদ্দার বলেন, আমাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। গত ২৬ জুনও আমি পুড়ে যাওয়া পাওয়ার কার ও বগিগুলো চালিয়ে নিয়ে কুলাউড়া থেকে শমসেরনগর আসাযাওয়া করেছি। তদন্তে কী পেয়েছেন বা কবে নাগাদ প্রতিবেদন দেওয়া হবে এ বিষয়ে কিছু জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হলে জিএম স্যারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে তখন আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের মহা ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন এ বিষয়ে বলেন, সিলেটে ট্রেনের পাওয়ার কারে আগুন লাগার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো এখনো তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়নি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তা পেয়ে যাবো। ১১ জুন শনিবার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পাওয়ার কারে আগুন লেগে গাড়ির পাওয়ার কারসহ আরও ২টি বগি পুড়ে যায়। এই ঘটনায় ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের দুটি এবং জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার করেন আরও একটি কমিটি । বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের চিপ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অজয় কুমার পোদ্দারকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি জোনাল কমিটি এবং বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে প্রধান করে বিভাগীয় কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রতিটি কমিটিকে পরবর্তী ৩ দিনের মধ্যে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল বলে তখন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জোনের মহা ব্যবস্থাপক ( জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন।
অপরদিকে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছিলেন তখন। মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল হককে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকেও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।
১১ জুন (শনিবার) দুপুরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেট -আখাউড়া সেকশনের শমসেরনগর ও মনু রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে পৌছালে চলন্ত ট্রেনের পাওয়ার কারে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। মুহূর্তে আগুন ধাউ ধাউ করে জলতে শুরু করে। যাত্রীদের চিৎকার ও আগুনের ধোঁয়া দেখে চালক কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের চৌশাইয়া এলাকায় ট্রেন থামিয়ে দেন। এ সময় আতঙ্কগ্রস্ত যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে অন্তত ৭ যাত্রী আহত হন।
খবর পেয়ে মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবারের এই ঘটনায় ট্রেনেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘটনার পর সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল ৪ ঘণ্টা বিঘ্নিত হয়। উদ্ধার কাজ শেষ হয় প্রায় ৪ ঘণ্টা পর বিকাল আনুমানিক পৌনে ৫টায় সিলেট রুটে আবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় ও সিলেটের সাথে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।