আজিজুর রহমান দুলাল, ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চললেও পৈচাশিক এই ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সাজার হার খুব কমই। প্রায় প্রতিদিন শুনা যাচ্ছে কোথাও না কোথাও শিশু ধর্ষনের কথা। কিন্তু এই কোমলমতি শিশুদের যেখানে জীবন সম্পর্কেই ধারনা হয়নি সেখানে সমাজের কিছু অমানুষ। এই কোমলমতি শিশুদের প্রতি পাশবিত নির্যাতন করে আসছে।
এদিকে সঠিক বিচারের দাবিতে আস্থার স্থান হিসাবে থানায় গিয়ে দিনের পর দিন পরে থাকতে দেখা যায় ধর্ষিতার শুভাকাঙ্খিদের। অথচ একসময় তাদের হাল ছেরে দিতে হয়, কারন অনেক সময় ন্যায় বিচারের সাথে যুদ্ধ করলেও প্রকৃত আসামীরা বিভিন্ন ছলনরার দ্বারা মামলা থেকে খালাস পেয়ে যাচ্ছে। পরে সমাজের কাছে ঐ ধর্ষিতা মেয়েটি দুঃচরিত্রা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। এমনই এই শিশু ধর্ষনের ঘটনা ঘটল মাদারীপুর সদর উপজেলার বাগের পার এলাকার থানথলী গ্রামে স্বর্ণালী আক্তার (১২) সাথে। আপন নানী সুফিয়া বেগমের সহযোগিতায় সৎ নানা হারুন হাওলাদার (৮৫) একাধিকবার ধর্ষন করল ১২ বছরের নাবালিকা শিশু স্বর্নালী আক্তার কে।
ধর্ষিতার মা সোনিয়া বেগম ও থানার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুরের তরমুগুরিয়ার (রাজ্জাক হাওলাদার কমপ্লেক্স) পুরাতন কাউন্টার সংলগ্ন হারুন হাওলাদার এই শিশু স্বর্নালীর নানা হওয়া সত্তে ও দীর্ঘ দিন যাবত একাধিকবার ধর্ষন করে আসছে। সোনিয়া বেগম আরো অভিযোগ করে বলেন, আমি ছোট সময় থেকেই দেখে আসছি যে আমার মা সুফিয়া বেগম একাধিক ব্যাক্তির সাথে পরক্রিয়ায় লিপ্ত হত। এ ছাড়াও দেহ ব্যাবসা ছিল তার একমাত্র পেশা যা আস্তে আস্তে রমরমা ব্যাবসায় পরিনত হয়। পরে আমার মা সুফিয়া বেগম এর সাথে ধর্ষক হারুন হাওলাদার পূর্ব পরিচিতি থাকায় আমার পিতাকে অন্যায় ভাবে তালাক প্রদান করে হারুন হাওলাদার এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আমার মা একজন দুঃচরিত্রা ও লোভী ব্যাক্তি হওয়ায় হারুন হাওলাদারের টাকা পয়সাকে পূজি করে জোর পূর্বক তাকে বিবাহ করে।
এক পর্যায়ে এই সুফিয়া বেগম একাধিক ব্যাক্তির সাথে পরক্রিয়ায় যুক্ত থাকায় হারুন হাওলাদারের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। কথায় আছে “কুকুরে কুকুর চিনে” এই সুফিয়া বেগমের পরক্রিয়ার কথাটা জেনে ও বিবাহ বিচ্ছেদের পরে অবৈধ ভাবে পুনরায় বসবাস করা শুরু করে তারা। কারন আমার মা জানত হারুন হাওলাদার এর কাছে যে টাকা পয়সা রয়েছে, সে গুলো নিজ আয়ত্তে রাখতে হলে যে ভাবেই হোক একই সাথে তাদের বসবাস করতে হবে। আমার মার এই অপকর্মের কথা আমার শ্বশুর বাড়িড় লোকজন জেনে গেলে তারা আমাকে দোষারপ করতে থাকে। কিছুদিন পরে আমার মার পরক্রিয়ার কথা জেনে গেলে ঐ স্বামীর ঘর থেকে তালাক প্রদান করলে আমি আমার সন্তান স্বর্নালী আক্তার (১২) কে নিয়ে চলে আসি। একজন বাঙ্গালী নারী হিসাবে একাকিত্ব জীবন পার করায় সমাজের চোখে খারাপ হওয়ায় ও প¦ার্শবর্তি শুভাকাঙ্খিদের কথায় আমি ২য় বিবাহ করি। পরে ঐ ঘরে আরিয়ান নামে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করে। আমার ২য় স্বামীর ঘরে কিছুদিন সময় ভালো কাটলেও আমার মা সুফিয়া বেগমের গভীর ষড়যন্ত্র ও তার এই দেহ ব্যাবসার কারনে এখান থেকেও আমাকে তালাক দেয়। এক পর্যায়ে আমার নাবালক দুটি সন্তান কে নিয়ে অসহায় হয়ে পরি। কিভাবে জীবন অতিবাহিত করব ভেবে না পেয়ে চাকুরি করার উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের ১৬ ই নভেম্বর নাবালক দুটি সন্তানকে চাচা মিনাল হাওলাদারের কাছে রেখে যাই। কারন আমি খুব ভালো করে জানি আমার মা একজন, দুঃচরিত্রা, দেহ ব্যাবসায়ী, নষ্টা মহিলা, তাই তিনি আমার সন্তানের কোন দেখভাল করতে পারবেনা, বরং ক্ষতি করার চেষ্টা করবে বলে আমি মনে করেছি। কিন্তু নিজের মান সম্মানের কথা চিন্তা করে চাচা মিণাল এর কাছে আমার মার সম্পর্কে কোন ধারনা না দিয়েই সন্তানদের রেখে চাকুরির উদ্দেশ্যে সৌদি আরব চলে যাই। আমার চলে যাওয়ার কথা সুফিয়া বেগম জানতে পেরে চাচা মিনালের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে হারুন হাওলাদার এর কথামত কৌশলে আমার দুটি সন্তানকে কিডনাফ করে।
পরে হারুন হাওলাদার এর নেতৃত্বে সুফিয়া বেগমের সহযোগিতায় ঢাকার একটি অজ্ঞাত বাসায় দুটি সন্তানকেই আটকিয়ে রাখে। ২৮ শে ফেব্রয়ারী ২০১৯ তারিখে সুফিয়া বেগমের সহযোগিতায় হারুন হাওলাদার এই নাবালিকাকে ১ম ধর্ষন করে। আস্তে আস্তে শুরু হয় এই শিশুর প্রতি অমানুষিক নির্যাতন। নিজের ইচ্ছামত যখন তখন জোর পূর্বক শিশু স্বর্ণালীকে একের পর এক ধর্ষন করতে থাকে। স্বর্নালী বাঁধা দিতে গেলে হারুন হাওলাদার বলে ধর্ষন করতে না দিলে তোর মাকে বিদেশেই মেরে ফেলব, আর তোর ভাইকেও তোর চোখের সামনে টুকরো-টুকরো করে ফেলব। তাই ভয় পেয়ে শিশু স্বর্ণালী এই ধর্ষকের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি। নিরবে সহ্য করেছে এই পাষন্ড নানা হারুন হাওলাদারের পাশবিক নির্যাতন। এদিকে ওদের কিডনাফের পর আমার সাথে মুঠো ফোনে কথা না হলে চাচা মিনালে মারফত জানতে পারি সুফিয়া বেগম আমার দুটি নাবালক সন্তানকে নিয়ে চলে গেছে। পরে আমার সন্তানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আমার মা সুফিয়া বেগম এড়িয়ে যায়। মুঠোফোনে কথা বলতে দেয় না। এক পর্যায়ে আমি সন্তানের খোঁজে দেশে চলে আসি। পরে সুফিয়া বেগমের এর দেওয়া ঠিকানা মারফত আমি উক্ত বাসায় গিয়ে হারুনসহ আমার মাকে দেখতে পাই। পরে আমরা সবাই মিলে মাদারীপুরে এসে আমার সন্তানসহ মাকে নিয়ে একই বাসায় থাকি।
পরে দেখা যায় আমার মাকে তালাক প্রদানকারি ধর্ষক হারুন হাওলাদার যে কোন সময় অবাঞ্চিত ভাবে আমাদের মাদারীপুরের বাসায় আসা- যাওয়া করে এবং আমার মেয়ে স্বর্ণালীর উপর কুদিৃষ্টির চোখে তাকায়। কিন্তু আমার মেয়ের সম্পর্কে নানা হওয়ায় আমি কিছু মনে করিনি। পরে ২৪ শে মার্চ আনুমানিক দুপুর ১.৩০ মিনিটের সময় আমার ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে বাজারে গেলে সুফিয়া বেগমের সহযোগিতায় হারুন হাওলাদার জোর পূর্বক স্বর্ণালীকে ধর্ষন করে। আমি বাজার থেকে ফেরার পর স্বর্ণালীকে কাঁদতে দেখি। পরে অনেক ভাবে জিজ্ঞেস করলে একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আমার কাছে ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করে। আস্তে আস্তে পিছনের একের পর এক পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা বর্ননা করতে থাকলে আমি চোখের জল ধরে না রাখতে পেরে মা ও মেয়ে দুজনে মিলে কাঁদতে থাকি।
ঘটনার সত্যতা জানার জন্য আমার দুশ্চরিত্রা মা সুফিয়া বেগমকে জিজ্ঞেস করলে আমার সাথে কথা কাটা-কাটির এক পর্যায়ে আমাকে খুব মারধোর করে। পরে জানতে পারি আমার মা হারুন হাওলাদারকে টাকার বিনিময়ে এই পৈশাসিক কাজে সহায়তা করেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করতে গেলে হারুন হাওলাদার এলাকার প্রতাপশালী হওয়ায় জোর চেষ্টা করেছে থানায় মামলা না নেওয়ার জন্য। কিন্তু একপর্যায়ে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করা হলে অভিযুক্ত দুই আসামী সুফিয়া বেগম ও হারুন হাওলাদারকে আটক করে পুলিশ। এদিকে হারুন হওলাদার এলাকার প্রতাপশালী হওয়ায় তার ব্যাক্তিগত কিছু সন্ত্রাসীবাহিনি দিয়ে আমাকে জীবনে মেরে ফেলার হুমকিসহ মাদারিপুর এলাকা থেকে বিতারিত করার হুমকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে আমি মানবেতর জীবন যাপন করছি। মাদারীপুর এলাকায় এখন আর আমি থাকতে পারছিনা কারন হারুন হাওলাদারের সন্ত্রাসী বাহিনি যে কোন সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারে। এ দিকে আমার জীবনসহ সন্তানদের জীবন বাঁচানোর জন্য ফরিদপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় আছি। আমার মুঠোফোনে ফোন করে ফরিদপুর থেকে মেরে ফেলবে অথবা মাদারীপুরে ধরে নিয়ে যাবে বলে হুমকি প্রদান করছে। আমি কোন হারুন হাওলাদারের সন্ত্রাসী বাহিনির হাতে জিম্মি হলে বা মারা গেলে এর জন্য দায়ী থাকবে আমার মা সুফিয়া বেগম ও ধর্ষক হারুন হাওলাদার। তাই এই পৈচাশিক ঘটনার তদন্ত পূর্বক হারুন হাওলাদার ও সুফিয়াবেগম সহ প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট শাস্তির দাবি করছি।