নবগঠিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনার নামে ‘নতুন নাটক’ শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, গিয়েছেন মাত্র ১২ জন। সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলছেন, ‘এই তামাশাগুলো কেন করছেন?’ যে কোনো চিন্তাশীল মানুষ যারা দেশকে ভালোবাসেন তারা খুব ভালো করেই জানেন, এখন যেটা প্রয়োজন তা হচ্ছে একটা জনগণের সরকার। নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে। আওয়ামী লীগের অধীনে হবে না।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়।
গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন ইসি অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বৈঠক করে। এটি কমিশনের প্রথম বৈঠক।
একজন শিক্ষাবিদের মত তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু-অবাধ হবে না, যদি সেখানে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার না থাকে। এটা আমার কথা নয়, এটা শিক্ষকদের কথা, শিক্ষাবিদের কথা।’
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি ভোটের অধিকার ফেরাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা যেমন চাল-ডাল নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি, হাটে-বাজারে সর্বত্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঠিক তেমনিভাবে ভোটের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও তার সুচিকিৎসা এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য, কারাগারে বন্দি নেতাদের মুক্ত করার জন্য আন্দোলনে নামতেই হবে।
দেশে সাধারণ মানুষের নয়, ক্ষমতাসীনদের আয় বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের আয় কিন্তু ১৫ হাজার টাকার বেশি নয়। সরকারের মাথাপিছু আয়ের বক্তব্য আর উন্নয়নের বুলি শুভঙ্করের ফাঁকি। তিনি বলেন, দেশের মানুষের জীবন আজ ওষ্ঠাগত। চাল, ডাল, তেল, লবণ ও চিনির দাম ১০০ থেকে ৩০০ ভাগ বেড়েছে। আজকে গোটা দেশে একটা নীরব দুর্ভিক্ষ সূচিত হয়েছে।
দুর্নীতি করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, এই দেশকে দুর্নীতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তারা সিঙ্গাপুর আর কুয়ালালামপুরে বাড়িঘর করে ফেলেছে। টাকাপয়সা লুট করে তারা ওখানে পাঠিয়ে দিয়েছে। যার ফলে তারা জনগণের সঙ্গে রসিকতা ও মশকরা করে বলে, মানুষের আয় বেড়েছে। জনগণ ভালো আছে।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশের অর্জনগুলোকে কেড়ে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকার বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। পুরোপুরিভাবে ক্রীতদাস করার সব ব্যবস্থা তারা করেছে।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, উলামা দলের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, কৃষক দলের শাহজাহান সম্রাট, মহিলা দলের পারভীন আখতার, তাঁতী দলের মজিবুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।