দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে দুই ভাই- বোন শিকলে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। তারা উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামের সরকারি গুচ্ছগ্রামের রফিকুল ইসলাম ও ওশনাআরা বেগম দম্পতির সন্তান।
বাবা রফিকুল ইসলাম দিন মজুর আর মা গৃহিণী ওশনাআরা বেগমের তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার নিয়ে বসবাস করছিলেন কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা গ্রামে। একপর্যায়ে তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে এবং মেঝ ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। গত তের বছর ধরে তারা শিকলবন্দি রয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মা ওশনাআরা বেগম তার ভাঙা ঘরের সামনের উঠানে খোলা আকাশের নিচে পাটায় ভর্তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে তার বড় মেয়ে আম্বিয়া (২৫) এবং মেঝ ছেলে রস্তম (২১) দুই ভাই-বোনকে তাদের ঘরের বারান্দায় পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে।
বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই ছেলে মেয়ের জন্য অনেক টাকা-পয়সা চিকিৎসায় ব্যয় করেও ভালো না হওয়ায় পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছি। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
মা ওশনাআরা বেগম জানান, প্রায় তের বছর আগে বড় মেয়ে আম্বিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। মেয়েকে প্রথমে বিয়ে দিই; ভেবেছিলাম স্বামীর সংসারে গেলে তার মেয়ে ভালো হতে পারে। কিন্তু ছয় মাস পর জামাই মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। এর পর তারা নিজেরাই মেয়েকে বগুড়া, রংপুর, পাবনায় চিকিৎসা করান। পরে ভালো না হওয়ায় টাকার অভাবে অল্প খরচে কবিরাজি চিকিৎসা করানো হয়।
তিনি আরও বলেন, তিন বছর আগে মেঝ ছেলে রস্তমের মধ্যে একই পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলে তাকেও কবিরাজি চিকিৎসা করানো হয়। বর্তমানে তারা টাকার অভাবে কোনো চিকিৎসা করাতে না পাড়ায় দুই ছেলে মেয়েকে পায়ে শিকল বেঁধে রাখেছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক জানান, ইউনিয়নে আসা সরকারি অনুদানের পাশাপাশি যখন যে পারে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। স্থায়ীভাবে সরকারি সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে চেষ্টাও করছেন তিনি।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টুকটুক তালুকদার জানান, তের বছর ধরে দুই ভাই বোনের পায়ে শিকলে বন্দি রাখার ব্যাপার তার অজানা ছিল। দুই এক দিনের মধ্যে আমি নিজে গিয়ে তাদের খোঁজখবর নেবো।