মোঃ নেছারুল ইসলাম, বরিশাল প্রতিনিধি: যাত্রীদের লঞ্চ ওঠানাের জন্য শ্রমিক ও কর্মচারীদের ইাঁকডাক নেই। দক্ষিণবঙ্গামী বেশির ভাগ মানুষ ছুটছে সড়কপথে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বদলে গেছে বরিশাল সদরঘাটের চিরচেনা চিত্র। সদরঘাটে লঞ্চ ধরার জন্য যাত্রীদের আগের সেই চাপ নেই। ধারণ সংখ্যার অর্ধেক যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ মনে করছেন, পদ্মা সেতু দেখার জন্য অনেকে এখন সড়ক দিয় যাচ্ছেন। কিছুদিন গেলে লঞ্চে আবার যাত্রীরা ফিরে আসবেন।
বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদীবন্দরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশে সন্ধ্য ছয়টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে গেছে ২৮টি। এর মধ্যে বরিশাল রুটে ছেড়ে যাবে ছয়টি লঞ্চ। তবে লঞ্চের যাত্রী তুলনামূলক কম ছিল।
বরিশালের এমভি সুন্দেরবন-১১ লঞ্চের ডাবল ও সিঙ্গেল কেবিন রয়েছে ২৫০টি। গতকাল বিকেলে পাঁচটা পর্যন্ত ৮৩টি কেবিন বুকিং হয়েছে। এ ছাড়া ডেকেও তমন যাত্রী নেই। পাঁচ শর বেশি যাত্রী হবে না। প্রায় 8০ ভাগ যাত্রী কমে গেছে বলে জানান লঞ্চটির কেরানি সোহেল মিয়া। লঞ্চে যাত্রী কমে যাওয়ার কথা বললেন এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের কেরানি মেহেদী হাসানও। তিনি বলেন, তাঁদের লঞ্চের ১১৫টি কেবিনের মধ্যে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বুকিং হয়েছে ৪৭টি কেবিন। লঞ্চ ছাড়ার আগে হয়তাে ৯০টি কেবিন বুকিং হতে পারে। তবে মেহেদীর বিশ্বাস, পদ্মা সেতু চালু হলেও যাঁরা লঞ্চে যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবাধ করেন, তাঁরা লঞ্চই যাবেন।
একই ধারণা বরিশালের এমভি পারাবিত লঞ্চের কর্মচারী বাবুল মিয়ার। তিনি বলেন, “লঞ্চে কম যাত্রী দেইখখা, মোগাে দুখখো নাই। পেথথম পেথথম হগলতে বাসে যাইবে। হেরপর যহন দেকপে বাসে ভাড়ার ট্যাহা বেশি তহন মােগাে লঞ্চেই আইতে হইবে।” অনেকে আবার টাকা বাঁচাতে বাসের পরিবর্তে লঞ্চ উঠেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, ‘সড়কপথে পদ্না সেত দিয়ে মুলাদী যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগবে। ভাড়া দিতে হবে প্রায় ৮০০ টাকা। এত সময় বাঁচবে। তবে যদি লঞ্চের ডেকে যাই তখন খরচ হবে প্রায় ৩০০ টাকা। এতে প্রায় অর্ধেক পরিমাণ ভাড়া কমে যাচ্ছে।
পদ্মা সেতুর কারণে লঞ্চ ব্যবসার কী হবে, তা এখনই বলার সময় হয়নি বলে জানালেন অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম আহবায়ক ও এমভি অভিযান লঞ্চের মালিক হামজা লাল। তিনি বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ ব্যবসাটি মূলত কেবিন বুকিংয়ের ওপর নির্ভর করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে আমাদের ব্যবসায়ে কিছুটা ঘাটতি হবে। এবার ঈদে ব্যবসা তেমন ভালাে হবে না।গত দুই দিনে প্রায় ৪০ ভাগ যাত্রী কমে গেছে। আগামী ছয় মাস পর ব্যবসা কী হবে, তা বোঝা মুশকিল।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মাে. শহিদউল্লাহ বলেন, গত রােববার পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু করায় ঢাকা নদীবন্দরে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। গত দুই দিনে যাত্রীর উপস্থিতি তুলনামূলক কম। নদীপথে যাত্রীদের খরচ কম। এরপরও সময় বাঁচানোর উদ্দেশ্যে দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে চলাচল করছেন যাত্রীরা।