হাইওয়ে রোড। সিলেট-টু-তামাবিল। শাহপরাণ এলাকায় অর্ধশতাধিক পিকআপ। ত্রিপল টানানো। পিকআপকে বলা হয় ‘ডিজে ট্রাক’। মাইক বাঁধা। উচ্চ স্বরে চলছে হিন্দি গান। ট্রাকে থাকা তরুণরা গানের তালে তালে নাচছে আর ফুর্তি করছে। হাতে রং। রাস্তায় চলাচল গাড়ি ও পথচারীদের গায়ে রং ছিটাচ্ছে।
মহিলা কিংবা তরুণী দেখলেই উৎপাত বাড়ে বেশি। অর্ধশতাধিক ট্রাক শহর অভিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। একটু সামনে হাইওয়ে পুলিশের গাড়ি। পাশে কয়েকটি ডিজে ট্রাক। পুলিশ আটকে দিচ্ছে এসব ট্রাককে। বটেশ্বরের একটু সামনে গিয়ে দেখা গেল রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয় লোকজন। ডিজে ট্রাক দেখলেই দিচ্ছেন বাধা। ফিরিয়ে দিচ্ছেন। শুধু বটেশ্বর এলাকায়ই নয়; পথিমধ্যে হরিপুর, দরবস্ত, জৈন্তাপুর বাজার ও চার নম্বর এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয়রা। হরিপুরে, দরবস্তের ঘটনার কারণেই ডিজে ট্রাক আটকে দিচ্ছে পুলিশ। ঈদের পরদিন। দুপুরের একটু আগে কয়েকটি ডিজে ট্রাক উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে জাফলং যাচ্ছিল। গাড়ি থেকে রং ছিটানো হচ্ছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ওই দুই এলাকার মানুষ। তারা কয়েকটি ডিজে ট্রাককে আটকে দেয়। গাড়ি থেকে নামিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর ফিরিয়ে দেয়া হয় শহর অভিমুখে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার পালা করে এলাকার লোকজন রাস্তায় পাহারা দিয়েছেন। জৈন্তাপুরের সোহেল আহমদ জানিয়েছেন- ঈদের দিন থেকেই জাফলং, লালাখাল অভিমুখে পর্যটকদের ঢল নামে। পরদিন বুধবার সকাল থেকেই শুরু হয় ট্রাকে মাইক বাজিয়ে আসা ‘গ্যাং’ ডিজের উৎপাত। এতে স্থানীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। মহিলাদের ওপর রং ছিটানোর কারণে ডিজে ট্রাকে উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠে। হাইওয়ে ও জৈন্তাপুর থানা পুলিশ উচ্ছৃঙ্খলতা ঠেকাতে কাজ শুরু করে। ফলে বিকালে গ্যাং ডিজের আর বেসামাল অবস্থা দেখা যায়নি। তবে মাইক্রোবাস কিংবা বাসে করে যারা পর্যটন এলাকায় গেছেন তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে। সকালের দিকে জাফলং পর্যটন স্পটে ডিজে ট্রাকে উন্মাতাল হয়ে তরুণরা ঢুকেছিল। পুলিশের কড়াকড়ির কারণে তারা পর্যটন এলাকায় উৎপাত করতে পারেনি। সিলেটে এবারের ঈদেই চোখে পড়লো ডিজে উৎপাত। এর আগে কখনো এরকম দৃশ্য চোখে পড়েনি।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকা। গত দু’দিনে শতাধিক ডিজে ট্রাক ঢুকেছে। তরুণরা মাইক বাজিয়ে ঢোকে সাদা পাথর পর্যটন স্পটে। ওখানে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কড়াকড়ি থাকার কারণে পর্যটন স্পটের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ডিজে ট্রাকের শব্দ ও উচ্ছৃঙ্খলতায় যন্ত্রণায় ছিলেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঈদের পরদিন দুপুরের দিকে ডিজে ট্রাকে আসা তরুণরা মহিলাদের ওপর রং ছিটায়। তারা নানা বেহায়াপনা করে। এতে করে এলাকায় ক্ষোভ দেখা দেয়। পুলিশের কড়াকড়ির কারণে অবশ্য দুপুরের পর উচ্ছৃঙ্খলতা কমে আসে। ভোলাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের নেতা আক্তারুজ্জামান নোমান জানিয়েছেন, গ্যাং ডিজের উন্মাদনার কারণে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় এলাকার লোকজন বৈঠক করেছেন। সার্বিক বিষয় জানিয়ে এ ব্যাপারে থানা পুলিশকে অবগত করা হবে। সিলেটের বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লালাখাল এলাকায়ও ছিল ডিজে ট্রাকে আসা তরুণদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড। গত বৃহস্পতিবার থেকে এসব এলাকায় ডিজে ট্রাকের উচ্ছৃঙ্খলতা ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) লুৎফর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ডিজে ট্রাকে উচ্ছৃঙ্খলতা ঠেকাতে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বুধবারও জাফলং এবং জকিগঞ্জ এলাকায় দুটি ট্রাক আটক করা হয়েছে। এছাড়া হাইওয়ে পুলিশ জেলা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে রাস্তায় টহল দিচ্ছে। তিনি বলেন- ঈদে রাস্তা কিংবা পর্যটন স্পটে কোনো উচ্ছৃঙ্খলতা বরদাশত করা হবে না। গোয়েন্দা পুলিশের ৮টি টিম মাঠে সাদা পোশাকে কাজ করছে বলে জানান তিনি। সিলেট জেলা পর্যটন পুলিশের ওসি আক্তার হোসেন জানিয়েছেন- এবার সিলেটের সব পর্যটন স্পটেই উপচে পড়ছে পর্যটকরা। উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ সামাল দিতে পর্যটন পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। তিনি বলেন, এবারই প্রথম ডিজে ট্রাকে তরুণদের উৎপাত দেখা যায়। পুলিশ তৎপর হওয়ার কারণে গতকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।