বাসুদেব বিশ্বাস,বান্দরবান: বান্দরবান জেল কারাগারে ৪০দিন হাজতবাস করে জামিনে বেরিয়ে আবারোও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে সুয়ালক এলাকার কিশোর গ্যাং প্রধান রকি বড়ুয়া (২৫) ‘রকি ভাই’।
বান্দরবান সদর উপজেলায় একসময় ছিনতাইয়ের ঘটনা শূন্যের কোটায় থাকলেও এখন আবারোও সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে ছিনতাই কাজে নেমেছে রকিও তার সহযোগী কিশোর গ্যাং। রকি বড়ুয়া এলাকায় ‘রকি ভাই’ নামে পরিচিত আর তার আতংকে এখন পর্যটন নগরী বান্দরবান সড়কে চলাচল করতে ভয় পাচ্ছে সাধারণ জনগণ।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নে বেআইনী জনতাবদ্ধে মারধর এবং সাধারণ জখম, চুরি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অপরাধে গত ৮এপ্রিল বান্দরবান সদর থানায় বিশ্বজিৎ দাশ নামে এক যুবক পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১৪৩,৩২৩,৩৭৯,৫০৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে এবং মামলা দায়ের করার পর পুলিশ অভিযান পরিচানা করে তাকে আটক করে আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে রকি জামিন প্রার্থনা করলে আদালত গত ১৮ মে তার জামিন মঞ্জুর করে।
এদিকে জামিন পেয়ে আগের রুপ ধারণ করে রকি। বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাতে কেউ বাইক নিয়ে এলে তাদের ধরে টাকা, মোবাইল ও অন্যান্য জিনিস হাতিয়ে নেয়া এবং রাতে মুল সড়কে জোরে মোটর বাইক চালিয়ে সাধারণ জনগণের সামনে গিয়ে ভয়ভীতি কার্যক্রম শুরু করে রকি ও তার দলের সদস্যরা।
সুত্রে আরো জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার বাজালিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রাজীব বড়ুয়ার সন্তান রকি বড়ুয়া। অল্প লেখাপড়া করেই পরিবারের অবাধ্য হয়ে জড়িয়ে যায় কিশোর গ্যাং এ। আর কিশোর গ্যাং তৈরি করে সহযোগীদের নিয়ে অবস্থান করে বান্দরবানের সুয়ালক এলাকায়।
এদিকে ৫ জুলাই (বুধবার ) রাত ১২টায় চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান আসার পথে সুয়ালক এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি মাইক্রোবাসকে গতিরোধ করে ছিনতাই করার কৌশল আটে রকি ও তার সহযোগীরা। পরে মাইক্রোবাস চালক উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে জোরে তাকে ওভারটেই করে চলে যাওয়ায় রক্ষা পায় গাড়ীর সকল যাত্রীরা।
মাইক্রোবাস এ থাকা বান্দরবানে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং গাড়ীর যাত্রী ও একুশে টেলিভিশনের বান্দরবান প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম টিটু বলেন, রাত বিরাতে ‘রকি ভাই ’ এর আতংকে এখন বান্দরবান সড়কে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, পর্যটন নগরী বান্দরবানের প্রবেশদ্বার এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আরো পুলিশ মোতায়েন থাকা জরুরী।
মাইক্রোবাস চালক মো.লোকমান জানান, রকি বড়ুয়াও তাদের কিশোর গ্যাংদের যথাযথ বিচার হতেই হবে,তাহলে আর কোন সন্ত্রাসী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠবে না। তিনি আরো বলেন, সন্ধ্যা থেকে রাতে এই গ্যাং সুয়ালক এলাকায় থাকে এবং সুযোগ পেলেই যে কাউকে ছিনতাই করে বসে।
বান্দরবান কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক একে ফজলুল হক জানান, গত ৮এপ্রিল বান্দরবান সদর থানায় একটি মামলার প্রেক্ষিতে রকি বড়ুয়াকে আদালতে তোলা হয়েছিল এবং কয়েকদিন হাজতবাস করে গত ১৮মে তার জামিন মঞ্জুর হয়।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, জামিনে বের হয়ে রকি বড়ুয়া আবারো অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িয়েছে এমন সংবাদ আমরা পেয়েছি এবং সংবাদ পাওয়া মাত্র বিষয়টি আমরা তদারকি করছি। তিনি আরো বলেন, পর্যটন নগরী বান্দরবানে যাতে সবাই শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে পারে সেজন্য পুলিশের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে এবং সুয়ালক যাতে নিয়মিত পুলিশের টহল দল অবস্থান করে নিরাপত্তা জোরদার করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ এপ্রিল বান্দরবান সদর থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা যৌথ অভিযান পরিচালনা করে বান্দরবানের দুর্র্ধষ ছিনতাইকারী রকিকে তার এক সহযোগী মো. এমরানসহ সুয়ালক এলাকা থেকে আটক করে। তার নামে সাতকানিয়া ও বান্দরবান থানায় ৮টিরও বেশি চুরি, ছিনতাই এবং মাদক মামলা রয়েছে।