নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে জামায়াত নেতার বিজয়ী ফলাফল কেন বাতিল করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত গেজেট প্রকাশ স্থগিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাফর আহম্মদ ও কাজী জিনাত হকের দ্বৈত বেঞ্চ এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একই সাথে ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ঘোষিত ফলাফল কেন বাতিল হবে না সেই প্রশ্নও রাখেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি ভুক্তভোগী জামায়াত নেতা (চেয়ারম্যান প্রার্থী) সাইয়েদ আহমদ অভিযোগ করেন, পঞ্চম ধাপের অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ফলাফলের কাগজ অনুযায়ী তিনি ২৮০ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
সে সময় তিনি আরো উল্লেখ করেন, বারগাঁও ইউনিয়নে তার চশমা প্রতীকে ৪ হাজার ৮৭১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী সামছুল আলম পান ৪ হাজার ৫৯১ ভোট। এতে ২৮০ ভোট বেশি পেয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। সন্ধ্যার পর থেকে উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার দফতরে ভোট কেন্দ্র থেকে একে একে সব ইউনিয়নের ফলাফল এসে পৌঁছে। কিন্তু ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে নয়টি ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তার ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণায় গড়িমষি শুরু করে। একপর্যায়ে আওয়ামী যুবলীগের নেতারা মিডিয়া কর্মীদের জোরপূর্বক বের করে দেয়। পরে প্রিজাইডিং অফিসার এ বি এম নোমানকে দিয়ে কাটা ছেঁড়া করে ফলাফল পরিবর্তন করে। এতে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনি (চশমা) প্রতীকে পেয়েছেন ২১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকায় প্রার্থী মো: সামছুল আলম পেয়েছেন ১ হাজার ২৭১ ভোট। অপর প্রার্থী আ: রাজ্জাক দুলাল (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ১৯৫ ভোট। প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরিত তার এজেন্টকে দেয়া ফলাফল সিটে তা লেখা রয়েছে। এ ফলাফল সিট আমার পোলিং এজেন্টদের মাধ্যমে রাত ৮টার সময় হাতে পাই। কিন্তু প্রিজাইডিং অফিসার এ বি এম নোমান ফলাফল সিট ওভারাইটিং করে কেটে ছিঁড়ে আমার চশমা প্রতীকে ২১০ ভোটের স্থানে ১১০, মোটরসাইকেলের প্রতীকে ১৯৫ ভোটের স্থানে ৯৫ ভোট। অপরদিকে নৌকার প্রাপ্ত ভোট ১ হাজার ২৭১ এর স্থানে ১ হাজার ৪৭১ লিখে জমা দেয়। বেআইনিভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা অম্বরনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এ বি এম নোমান ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সোনাইমুড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো: বরকত উল্যাহর যোগসাজশে কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সকল প্রার্থীর ভোটকে কাটা ছেঁড়া করে পরিবর্তন করে রাত সাড়ে ১০টায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. সামছুল আলমের নৌকা প্রতীককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ফলাফল পাল্টে দেয়ার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাৎক্ষণিক অভিযোগ করে সন্তোষজনক কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। উল্টো রিটার্নিং কর্মকর্তা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণায় দৃঢ়তা দেখিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। ভুক্তভোগী প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফল বাতিলের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে সাইয়্যেদ আহম্মদ চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে একটি রিট দাখিল করেন। ১৮ জানুয়ারি আদালত শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ১০ জনের রুল জারি করেন। বাদিপক্ষের মামলা পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।