করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাঝেও সাধারণ ছুটি না বাড়িয়ে সরকার সবচেয়ে বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।তিনি বলেন, ছুটি প্রত্যাহারের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্তের দিকে ঠেলে দেয়া হল। এটা সরকারের সবচেয়ে বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। পরবর্তীতে হয়ত আফসোস করারও সুযোগ থাকবে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের নীতির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, টাকার জন্যই জীবন, মানুষের জীবনের দরকার নেই-এটাই সরকারের নীতি। মানুষকে বিপদে ফেলে দেয়ার এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা বার্তার প্রতিও সরকারের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন। এই ছুটি প্রত্যাহারের জন্য করোনা ভাইরাসে প্রাণহানি সব দায় সরকারকেই নিতে হবে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ মহামারীতে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবী। বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশও যেন করোনার ছোবলে নীল হয়ে উঠেছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় দেশে দেশে নেয়া হয়েছে লকডাউন, কারফিউ-জরুরি অবস্থাসহ নানা কঠোর পদক্ষেপ। আর বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশেই ‘ছুটি’ দিয়ে কথিত লকডাউন বলে প্রচার করে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে কেউ ‘ছুটি’ শব্দটি ব্যবহার করেনি। আমাদের পাশের দেশ ভারতও ঘোষণা দিয়ে লকডাউন করেছে। মুসলিম দেশগুলো কারফিউ দিয়েছে। ‘ছুটি’ শব্দটি কেন দেয়া হলো তা নিয়ে সব শ্রেণীর মানুষের মাঝে বিস্ময় রয়েছে। ‘ছুটি’ শব্দটি প্রয়োগ করে শৈথল্য অপসারণ করা সম্ভব নয়।
সরকার মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, গার্মেন্টস, দোকানপাট, হাটবাজার, ব্যাংক-বীমা, সরকারি অফিস-আদালত-এতকিছু খোলা রেখে কঠোরভাবে ছুটি পালনের নামে জনগণের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এখন সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর পাশাপাশি বাস, রেল ও লঞ্চের মত গণপরিবহন চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সরকার। প্রতিটি বোধসম্পন্ন মানুষ আশা করেছিল যেভাবে প্রতিদিন ভয়াবহ বিপর্যয়ে ধাবিত হচ্ছে করোনা মহামারী, তাতে সরকার হয়তো কঠোর পদক্ষেপ নেবে। এখনই উপযুক্ত সময় ছিল কিছুদিনের জন্য হার্ড-লকডাউন কার্যকর করে জনগণকে ব্যাপকহারে টেস্টের আওতায় এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা।
‘কিন্তু সরকার সেই পথে না গিয়ে হাঁটছে মৃত্যুর মিছিল বাড়ানোর পথে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেশি টেস্ট এবং কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রনে আনার পর শিথিল করছে আর এদেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ভীতিকর মাত্রায় প্রতিটি মানুষ যখন আতঙ্কিত-উৎকন্ঠিত তখন ছুটি নামের তথাকথিত লকডাউন তুলে নেয়ার পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার কি প্রমাণ করতে চায় ‘করোনার থেকে তারা শক্তিশালী?’-যোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ৩১ মে থেকে ছুটি প্রত্যাহার করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে মৃত্যুগহব্বরের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেরা নিরাপদ দুরত্বে থেকে নিজেদের বেশ শক্তিশালী মনে করা যায়। সরকারের মন্ত্রী-নেতারা হঠকারী ও অবিবেচক সিদ্ধান্ত দিতেই পারঙ্গম।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশে ঝড়ের বেগে সংক্রমিত হচ্ছে করোনা ভাইরাস। ভাইরাসের রাজনীতিকরণে ব্যস্ত সরকার। তারা বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থতা ঢাকতেই মানবজীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ একাই নয়, মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের তান্ডবে বিশ্বের প্রতিটি দেশই বিপর্যস্ত। তবে যেসব দেশ মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবকে সাধারণ সংকট ভেবে কর্ম পরিকল্পনা তৈরী করেছিল তাদেরকে নজিরবিহীন পরিস্থিতি মোকবেলা করতে হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা দেখেও কোনো কিছু শিখেছি বলে মনে হচ্ছে না।