তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সম্প্রতি ছুটিতে প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন এসব এলাকায়। ফলে জেলার পর্যটনখাতে পাঁচ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থা। পরিবেশ সংরক্ষণের কথা চিন্তা করে আজ মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) থেকে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বাইক্কা বিল টানা ৯ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রশাসন।
খ্রিষ্টানদের বড়দিন উপলক্ষে রোববার ছুটি থাকায় টানা ৩ দিনের ছুটি মেলায় সারাদেশের সব পর্যটন এলাকার মতো চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারেও পর্যটকের ঢল নেমেছিল।
পাঁচ তারকা হোটেল, রিসোর্টসহ শতাধিক হোটেল-রিসোর্টে ছিল পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়। শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান, কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হরিণছড়া গলফ মাঠ, পরিযায়ী পাখির বাইক্কা বিল, হাইল হাওর, বধ্যভূমি একাত্তরসহ সব দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকনিকে বাস ভাড়া নিয়ে ডে ট্যুরে আসা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ আগমনে মুখর হয়ে ওঠে পুরো জেলা জুড়ে। রাজধানী ঢাকা থেকে খুব কাছের এবং নিরিবিলি পরিবেশে অবকাশ যাপনের জন্য মৈলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল অতুলনীয় স্থান পর্যটকদের। স্থানীয় হোটেল মালিকেরা জানান এবারের পুরো শীত মৌসুমেই পর্যটকের আগমনের প্রত্যাশা রয়েছে অনেক বেশি।
জেলার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় পর্যটকের জন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বর্ষীজোড়া ইকো পার্ক, মুরইছড়া ইকো পার্ক রয়েছে। এর মধ্যে শুধু লাউয়াছড়া উদ্যান থেকে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৩ দিনে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৪ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক নারী-পুরুষ, শিশুসহ ছিলেন ২২ জন। দেশি পর্যটক ছয় হাজার ৪১৯ জন ছিলেন। ছোট-বড় যানবাহন ছিল ৩৪৭টি।
তিন দিনে মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। শুক্র, শনি ও রোববার সবক’টি হোটেল-রিসোর্ট শতভাগ বুকিং ছিল। পর্যটকের থাকা-খাওয়া, পরিবহন, হকারসহ কেনাকাটা সবমিলিয়ে পাঁচ কোটি টাকা আয় হয়েছে। বিশেষ করে পুরো শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টসহ সবাই ভালো ব্যবসা করেছে। ধারণা ছিল অন্তত ২০ কোটি টাকা আয় হবে। একই দৃশ্য পর্যটকরা বার বার দেখতে চান না। সেজন্য নতুনত্ব সৃষ্টি করা জরুরি বলে মনে করেন শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি সেলিম আহমদ। পর্যটকদের ভোগান্তি কমাতে মাধবপুর লেকের রাস্তা এবং শ্রীমঙ্গল ডলুবাড়ি হয়ে নূরজাহান চা-বাগানের সড়কটি প্রশস্ত করন ও রাস্তার মেরামতের জন্য জোর দাবি জানান তিনি।
শ্রীমঙ্গলের উপজেলায় হাইল হাওরের বড়গাঙিনায় অবস্থিত বাইক্কা বিল দেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন বাইক্কা বিলে। শীতকালে এই বিলে অসংখ্য অতিথি পাখি নামে। সড়ক মেরামতসহ জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য আগামী ৩রা জানুয়ারি পর্যন্ত বাইক্কা বিল সকল দর্শনার্থীর জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩রা জানুয়ারি পর্যন্ত এই স্থান এড়িয়ে চলার জন্য পর্যটকদের অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।