
ছাত্রলীগ না করায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার সকালে আহত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীকে ত্রিশাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, রোববার রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নিহাদ বলেন, ছাত্রলীগের গ্রুপভিত্তিক রাজনীতি না করার অভিযোগে মূলত আমাকে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আমার বুকে রামদা ধরা হয়। খালেদা জিয়ার ছবি আমার ফেসবুকে আপলোড দেওয়ানো হয়। আমার একটা ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক বলানো হয়, ২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের নেতাকর্মী থাকবে না। রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগে ওয়ালিদ নিহাদ বলে, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পলাশ ভাই আমাকে হলে ডেকে নিয়ে যান । সেখানে আমাকে থাপ্পড় মারেন নাট্যকলা বিভাগের হিমেল ভাই। আমার বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তুহিন ভাই, ২০১৪-১৫ সেশনের মুমিন ভাই, একই বিভাগের অ্যালেক্স সাব্বির ভাই, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তানভীর ভাইসহ আরও ৫-৬ জন টানা লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। সঙ্গে ফোকলোর বিভাগের যাযাবর নাঈম (আবু নাঈম আব্দুল্লাহ) ভাই লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। গলায় ও বুকের ওপর দাঁড়িয়ে মেরেছেন নাঈম ভাই। লিখিত অভিযোগে সে আরও বলে, পারিবারিক সমস্যার কারণেই আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে নাকি রাজনীতি না করে উপায় নেই। আমাকে বলা হয়, কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার না চাইতে। বেশি কথা বললে বুয়েটের আবরারের মতো পরিণতির হুমকি দেওয়া হয়।
ওয়ালিদ নিহাদকে নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক আটকে সমাবেশ করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের বিচারের দাবিতে আলটিমেটাম দেন তারা। দুপুরে আবার বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার বলেন, বিষয়টি সকালে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার বলেন, নিহাদ এখন ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছে।
প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ঘটনা শোনার পর আহত শিক্ষার্থীকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। আমি তার পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান বলেন, এ ঘটনার সত্যতা এখনো আমি পাইনি। যদি আমার কোনো ছাত্রলীগ কর্মী এর সঙ্গে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।