ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পরিবার কল্যাণ সহকারী সেই চামেলী শিকদারের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। কর্মস্থলে ছুটি না নিয়ে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকায় এলাকাবাসীর অভিযোগ ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, চামেলী শিকদারের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের পল্লিবেড়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকায় পরিবার কল্যাণ সহকারী হিসেবে নিযুক্ত আছেন। চামেলী শিকদারের স্বামী সুশান্ত শিকদার কাউলীবেড়া কাজী ওয়ালীউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। সুশান্ত শিকদারও কর্মস্থলে ছুটি না নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানান ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেজবাহউদ্দিন। যদিও করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
ভাঙ্গা উপজেলা পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা রবিন বিশ্বাস এ সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিবার কল্যাণ সহকারী চামেলী শিকদারের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ পেয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি নোটিশের জবাব দেননি। এর প্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহ হতে তার বেতন-ভাতা প্রদান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ হতে অভিযোগের তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং চামেলী শিকদারের কাছে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিমউদ্দিন বলেন, চামেলী শিকদারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহবুব হোসেন বলেন, চামেলী শিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শেষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, চাকরিস্থল হতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার খবরের পর চামেলী শিকদার ভারত থেকে দেশে ফেরার সংবাদ পাওয়া গেলেও তার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে তার দেখা মেলেনি। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হয়। ফোন খোলা থাকলেও, কেউ কল রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত চামেলি শিকদারের স্বামী সুশান্ত সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে বাড়িতে গিয়েও তার দেখা মেলেনি।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পরিবার কল্যাণ সহকারী চামেলী শিকদারের বিরুদ্ধে অফিস ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি চাকরি করেন সরকারি, কিন্তু অফিসে আসেন না। মাঠ পর্যায়ে কাজও করেন না। বছরের বেশিরভাগ সময়েই তিনি থাকেন দেশের বাইরে। ছুটিও নেন না। তবে অফিস থেকে মানুষের জন্য বিতরণকৃত ওষুধপত্র ঠিকই তুলে নিতেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১০ বছর ওই এলাকায় পরিবার কল্যাণের কোনও কাজই করেননি চামেলী শিকদার। কারণ তিনি দেশেই থাকেন না। ইতোমধ্যে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভারতে বাড়িও করেছেন। সেখানে তার সন্তানরা থাকেন, পড়াশোনাও করে সেখানে। চাকরির বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ নিলেও তিনিও সন্তানদের সঙ্গে ভারতেই বেশিরভাগ সময় থাকেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।