মোহাম্মদ মিলন আকতার, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ কবি রজনীকান্ত সেন লিখেছেন “বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঁ ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্রালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টির ঝড়ে। ”
কবির কালজয়ী এ ছড়ায় বলা বাবুই পাখির আবাস সমৃদ্ধ তালগাছ আজকাল তেমন চোখে পড়েনা। দেখা মেলেনা সাদা চঞ্চল নিষ্ঠাবান বুনন শিল্পী পাখির ও গ্রাম-বাংলার মাঠের ধারে, পুকুর পাড়ে কিংবা মাঠের পাড়ে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলা থেকে।
তেমনি হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতির শিল্পী পাখির। ভোরবেলার কিচিরমিচির, সুমধুর ডাকাডাকি আর উড়াউড়ি। মুলত তালগাছেই বাসা বাঁধতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বাবুই পাখি।
নিপুন কারিগর বলা হয় বাবুই পাখিকে। বাবুই পাখিরা শারীকভাবে ছোট হলেও তাদের জ্ঞান ভান্ডার রয়েছে প্রচুর। এক সময় গ্রাম-অঞ্চলে অবাধ বিচরণ ছিল তাদের। সুরেলা শব্দে মন মাতানো কিচিরমিচির শব্দ আগের মত এখন তেমন শোনা যায় না। বুদ্ধিমান বাবুই পাখি ও তাদের দৃষ্টিনন্দন বাসা। বয়স্করা জানান, পাখিটি খুবই বুদ্ধিমান ও দেখতে চোট হলেও বুদ্ধিতে সব পাখিকে হার মানায়।
বৃষ্টির দিনে নিরাপদে নিজ বাসায় থাকে এই পাখি। লাগামহীন গুড়ি গুড়ি বাদলের হালকা হাওয়ায় দোল খায় উচু তালগাছে বাবুই পাখি দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। এরকম দৃশ্যপট জানালা দিয়ে দেখতে কি দারুণ লাগতো। এখন এসব তেমন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা মেলে না গ্রীমীণ জীবনে।
আগে সারা দেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁও জেলার গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়তো দৃষ্টিনন্দন বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম-বাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী নিপুন বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি ও তাদের বাসা। পাখিটি সু-নিপুনভাবে খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা,খেজুরের কচিপাতা, সুপারির কচিপাতা, নারকেল গাছের কচিপাতা, বাঁশবনের লতাপাতা দিয়ে উচু তালগাছ, সুপারির গাছ ও খেজুর গাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করে বসতি করতো।
বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত । ছোট পাখিগুলো মেধাবী বলেই এরা সুন্দর বাসাবুনে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রবল ঝড়ে বাতাসের সাথে টিকে থাকতে হবে এমনটা মাথায় রেখে তারা বাসা তৈরি করে থাকে। বড় আশ্চর্যের বিষয় হলো আবহাওয়ার তারতম্যের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাসার ভিতরে থাকে কাঁদার আর গবরের প্রলেপ। বাসার ভিতরে ঠিক মাঝ খানে একটি আঁড়া তৈরি করে থাকে।
যেখানে পাশাপাশি দুটি পাখি প্রেমালাপসহ নানা রকম গল্প করে। তারপর চির নিদ্রায় যায় এ আঁড়াতেই। দেখা গেছে মুক্ত মনের বাবুই পাখির বাসাটা টেনেও ছেড়া খুব কঠিন। পাখি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন – বাবুই পাখি একাধারে শিল্পী, স্থপতি ও সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি।
এরা এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যায়, পছন্দেরর সঙ্গী খোঁজতে। সঙ্গী পছন্দ হলেই স্ত্রী বাবুইকে নিয়ে গাছের ডালে দু’জনই বাসা তৈরি করে সংসার পাতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাবুই পাখি খাবারের জন্য ঝাঁক বেধে নামে। প্রতিটি বাবুই পাখির ওজন ১০০-১৫০ গ্রাম। এক দিকে বাবুই পাখি শিকার অন্যদিকে তালগাছ ও খেজুরগাছ বিলুপ্তির কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে বাবুই পাখি । জানা যায়, পুরুষ বাবুই পাখি এক মৌসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এরা ঘর -সংসার করতে পারে ছয় সঙ্গীর সাথে। তাতেই স্ত্রী বাবুই ‘র বাধা নেই। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তাপ দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা দেয় এবং তিন সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা ছেড়ে উড়ে যায়। স্ত্রী বাবুই দুধ-ধান সংগ্রহ করে এনে বাচ্চাদেন খাওয়ায়।