শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত মসজিদের বিস্ফোরণে মৃত্যুর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৩৪। এই বিস্ফোরণ ও আগুনের জন্য দায়ী তিতাসের গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ। একটি লিকেজ থেকে এত মানুষের প্রাণহানির পর তিতাসের বিতরণ এলাকার মানুষ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পাইপলাইনের লিকেজ নিয়ে। তিতাসের হাতে যে তথ্য রয়েছে, তাতেই বলা হচ্ছে এক হাজার ৬২২টি লিকেজ রয়েছে তাদের বিতরণ এলাকায়। এর মধ্যে সংস্কার করে ঠিক করা হয়েছে ৭৮১টি। বাকি ৮১৪টি এখনও অরক্ষিত। প্রশ্ন উঠেছে, এই ৮১৪টি লিকেজ থেকে তাহলে কত দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে!
ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস বিতরণ করে তিতাস। বেশির ভাগ পাইপলাইনেরই মেয়াদ ফুরিয়েছে অনেক আগে। এসব পাইপলাইন একবার বসানোর পর নিয়মিত দেখভালেরও অভাব রয়েছে। গ্রাহক লিকেজ খুঁজে পেলে তিতাসকে ফোনে জানালে তিতাস ব্যবস্থা নেয়। অন্তত নারায়ণগঞ্জে দুর্ঘটনার পর তিতাস প্রমাণ করে দিয়েছে পাইপলাইনের লিকেজ খুঁজে বের করার দায় গ্রাহকের। গ্রাহক জানার পরও তিতাসকে না জানানোটাই তাদের অপরাধ। আর তিতাসের জানাশোনার বাইরে দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তিতাসের কোনও দায় নেই।
নারায়ণগঞ্জ মসজিদে দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব সম্প্রতি জানান, তিতাস চার লাখ রাইজার অনুসন্ধান করে ৭ শতাংশে লিকেজ পেয়েছে। অর্থাৎ তিতাসের কাছে আগে থেকেই লিকেজের খবর রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা সংস্কার করা হয় না। তবে এই দুর্ঘটনা ঘটার পর তিতাস কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে।
তিতাসের পক্ষ থেকে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাতে প্রত্যেক বিভাগের জন্য আলাদা টেলিফোন নম্বর দিয়ে লিকেজের তথ্য জানাতে গ্রাহককে অনুরোধ করা হয়েছে। তিতাসের হাতে থাকা লিকেজগুলো দুই মাসের মধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এসব লিকেজ থেকে এর মধ্যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
তিতাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, ‘বড় একটি ধাক্কা না খেলে আমরা শিখি না। গ্যাস বিতরণ লাইনে ত্রুটিগুলো সময়মতো ঠিক করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও আমাদের এখানে তা হয় না।’ এর জন্য তিতাসের গাফিলতিকেই তিনি বড় করে দেখেন।
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে হয়তো বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে গ্যাসের কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটেই চলেছে।’
তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) রানা আকবর হায়দারি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে লিকেজের তালিকা করেছি। তালিকা অনুযায়ী জোন ভাগ করে সেই জোনের ডিএমডি এবং জিএমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা বেশিরভাগ লিকেজ মেরামত করতে পারবো বলে আশা করছি। যেসব লিকেজ মেরামতের ক্ষেত্রে অনেক টাকার প্রয়োজন, সেগুলা বাছাই করে হেড অফিসে পাঠাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কাজ শুরু করে দিতে বলা হয়েছে। যাতে করে যা বিল আসে তা বোর্ডে পাস করে দ্রুত ছাড় দেওয়া যায়। ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের ডিএমডি এবং ঢাকা নর্থ আর সাউথের জিএমকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে তাদের এলাকার লিকেজের হিসাব আমাদের দিয়েছেন।’
তিনি জানান, ‘আমরা জোন ভাগ করে তালিকা ধরে ধরে একটা একটা করে লিকেজ মেরামত করতে বলেছি। এর মধ্যে বেশিরভাগ লিকেজ সারাতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তবে কিছু আছে জটিল। যেমন হাইওয়ের নিচে অথবা নদী বা খালের নিচের, সেগুলোও এখন বের করে মেরামত করতে বলা হয়েছে। এইগুলো মেরামত করতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে।’