গাজীপুরে পথের কাঁটা দূর করতে প্রেমিকের সহায়তায় এক নারী তার স্বামীকে খুন করে লাশ বালুচাপা দিয়ে রাখে। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে তারা এ হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে জানা যায়। এ ঘটনায় ওই নারী ও তাঁর প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ক্লুলেস খুনের এ ঘটনায় নিহতের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উন্মোচন করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। আজ রোববার জিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মো. জাকির হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কুড়িগ্রামের রৌমারী থানাধীন বড়াইকান্দি এলাকার রূপালী খাতুন (২৫) এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানাধীন নীলেরচর এলাকার মোহাম্মদ সুজন মিয়া (১৯)।
নিহত জাহিদুল ইসলাম কুড়িগ্রামের রৌমারী থানাধীন চর গোয়ালমারী এলাকার বাসিন্দা।
জিএমপির উপকমিশনার মো. জাকির হাসান জানান, জাহিদুল ইসলাম প্রায় দশ বছর আগে রূপালী খাতুনকে বিয়ে করেন। তাদের সাত বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন শৈলডুবি এলাকায় সপরিবারে ভাড়া বাসায় থেকে নরসুন্দরের (নাপিত) কাজ করতেন জাহিদুল। গত ৬ জুলাই রাতে তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ১০ দিন পর গত ১৬ জুলাই দুপুরে পঁচা দুর্গন্ধের সূত্র খুঁজতে গিয়ে প্রতিবেশী সফর উদ্দিন সাফার নির্মানাধীন বাড়ির একটি কক্ষের মেঝের বালুর নিচে চাপা দিয়ে রাখা এক ব্যক্তির হাত ও হাঁটুর আংশিক বের হয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পায় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে বালুর নিচ থেকে জাহিদুল ইসলামের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।
জিএমপি সূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুর থানা পুলিশের একাধিক টিম কাশিমপুর, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। তারা তথ্য প্রযুক্তি ও ম্যানুয়েল ইন্টিলিজেন্সের সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কুড়িগ্রাম থেকে রূপালী খাতুনকে এবং জামালপুর থেকে সুজন মিয়াকে গতকাল শনিবার গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে খাওয়ানোর পর ঘুমন্ত জাহিদুলকে বালিশচাপা দিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করেন গ্রেপ্তারকৃতরা। ঘর বাঁধার আশায় তারা পথের কাঁটা দূর করতে জাহিদুলকে খুন করেন। এ সময় তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বালিশ জব্দ করা হয়।
আজ গ্রেপ্তারকৃতদের গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস জাহিদুল ইসলাম খুনের রহস্য উন্মোচন করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রায় নয় মাস ধরে অপেক্ষাকৃত কম বয়সের সুজনের সঙ্গে রূপালী খাতুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর জেরে স্বামী সন্তান ফেলে রূপালী একাধিকবার সুজনের কাছে চলে যান। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে জাহিদুল ও রূপালীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল। এক পর্যায়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে পথের কাঁটা দূর করার জন্য স্বামীকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় রূপালী। প্রেমিক সুজনকে নিয়ে তিনি ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে জাহিদুলকে হত্যা ও লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেন।
আসামিরা জানান, পরিকল্পনানুযায়ী গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে স্বামী জাহিদুলকে দুধের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ান রূপালী। পরে রাত ১টার দিকে ঘরে ঢোকেন সুজন। এরপর হত্যার জন্য ঘুমন্ত জাহিদুলের হাত-পা চেপে ধরেন। এ সময় রূপালী ভিকটিমের বুকের উপর চড়ে বসে এবং বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে জাহিদুলের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে নিহতের লাশ পার্শ্ববর্তী ছফর উদ্দিনের নির্মাণাধীন বাড়ির একটি কক্ষের মেঝেতে বালুর নিচে চাপা দিয়ে রাখেন তারা। এ ঘটনার পর রূপালী খাতুন গত ১২ জুলাই কাশিমপুর থানায় একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৭ জুলাই জাহিদুল তার বড় ভাইকে বিমানবন্দর থেকে আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর রূপালী খাতুন ও সুজন গাজীপুর ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।