কোচিং সেন্টারে পাঠদানের নামে একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ৬ মিনিটের একটি পুরোনো ভিডিও করোনাকালে নতুনভাবে ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি নেটিজেনরা ফেসবুকে শেয়ার করে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবী করছেন।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন শিক্ষক একটি কক্ষে কয়েকজন ছাত্রীকে পাঠদান করছেন। যতক্ষণ তিনি পাঠদান করছেন ততক্ষণই তিনি ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত রাখছেন। আবার কোনো ছাত্রীর ঠোঁট টেনে নিজের মুখের কাছে নিচ্ছেন। এতে ছাত্রীরা বিব্রত বোধ করায় তিনি বেত হাতে নিয়ে সামনে ঘোরাঘুরি করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক সরদারের। তিনি ওই স্কুলের পাশে ভাড়াকৃত কক্ষে শুধু ছাত্রীদের জন্য কোচিং সেন্টার খুলে নিজেই পাঠদান করেন। ওই কোর্চিং সেন্টারে পড়তে আসা ছাত্রীদের যৌন হয়রানির এই ভিডিওটি ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রথম স্থানীয়দের মাধ্যমে এলাকায় ছড়ায়। তৎকালীন সময়েও ভিডিওটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো। এছাড়া ওই এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচীও পালন করা হয়েছিলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নুরুল হকের ওই আপত্তিকর ভিডিও নিয়ে বরিশাল মহিলা পরিষদ ও মহিলা অধিদপ্তরের নেতৃবৃন্দরা ২০১৬ সালেই উদ্বেগ জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছিলেন। পরে স্থানীয় প্রশাসনের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝুমুর বালার মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষক নুরুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একই সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও ঘটনার তদন্ত করে ওই বছরের জুলাই থেকে শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সাথে তাকে ওই বিদ্যালয় প্রত্যাহারও করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের মে মাসে অভিযুক্ত শিক্ষক নুরুল বেতন-ভাতা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রত্যাহারের পর ওই শিক্ষক নিজেকে আত্মগোপন করে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে আসেনি। তবে উপজেলার শিকারপুর ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার পর অদৃশ্য কারণে শিক্ষক নুরুলকে আবারও ওই বিদ্যালয়ে দেখা যায়। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে করোনা মহামারির আগেও শিক্ষক নুরুল অবৈধভাবে ওই বিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছেন।
এদিকে ২০১৬ সালের ওই ভিডিও চার বছর পরে করোনাকালে আবারও ফেসুবকে ভাইরাল হওয়া নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক নুরুল হক সরদার জানান, বর্তমানে স্কুলের শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে একটি মহল পুরোনো ওই ভিডিও আবারও ছড়াচ্ছে।