বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ নিজেদের নামে জমি, সেই জমিতে নতুন ঘর। (১০ জুলাই) রবিবার পবিত্র ঈদ-উল আযাহার দিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই নতুন ঘরে প্রথম কোরবানির ঈদ উদ্যাপন করছেন সুবিধাভোগীরা। অন্যের জমিতে বা বাড়িতে থাকা মানুষগুলোর ঈদের দিন ছিল অন্যবারের চেয়ে আলাদা। নতুন বাড়িতে ঈদ উদ্যাপন করেছেন বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ঘষিয়াখালি ও পঞ্চকরন ইউনিয়নের দেবরাজ আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা। বিশেষ করে বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ঘষিয়াখালী আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা কোরবানির ঈদ একটু বেশী উপভোগ করেছেন,কারন আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের অনুরোধে ফুলহাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা এখানকার বাসিন্দাদের একটি কোরবানির গরু উপহার দিয়েছেন।এই গরু কোরবানির পর সবাই মাংস ভাগ করে নিয়েছেন।
এই আশ্রয়নেরই বাসিন্দা আসিয়া বেগম নামের একজন বলেন, ‘জীবনে ভাবছি না নিজের ঘরে ঈদ করতে পারমু। প্রতিবছর কেউর না কেউর (কারও না কারও) দুয়ারে গিয়া থাকতাম একটু মাংসের আশায়। এইবার আল্লায় মুখ তুলিয়া চাইলেন। নতুন ঘরে প্রথম ঈদ করলাম। পেট ভরে গোশত খাইলাম এর মতো আনন্দের কিছু নাই।তবে পঞ্চকরন ইউনিয়নের দেবরাজ আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের ঈদ কেটেছে ভিন্নভাবে এই আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রতিটি পরিবারই দরিদ্র। ঈদুল আজহা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। ওইসব গ্রামে প্রতিযোগিতা চলছে কারা কত বেশি দামে গরু-ছাগল কিনে কোরবানি দেবে। অথচ দেবরাজ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সরকারের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার হিসেবে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল ছাড়া অন্য কোন সহায়তা পৌছায় নি বলে দাবি তাদের। আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিবারের অভিভাবকদের তাদের শিশুদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দেওয়ারও সামর্থ্য নেই।এই আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘরে বসবাস করছেন হাজেরা বেগম বয়স এখন ৬৪ বছর। ২০ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় পাশের ইউনিয়নের একটি গ্রামে। চার বছর সংসার করার পর দিনমজুর স্বামী আলী হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করে ৪০ বছর আগে হাজেরা বেগমকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তখন দুই বছর বয়সী শিশুসন্তান নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে জীবন চালাতে শুরু করেন এই নারী ।৪০ বছর ধরে ঈদ কাটিয়েছেন মানুষের বাড়িতে। এই বছর হাজেরা বেগমের জীবনে ঈদ এসেছে আশীর্বাদ হয়ে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে সেখানে তিনি ঈদ উদ্যাপন করেছেন। মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরন ইউনিয়নের বাসিন্দা এই হাজেরা বেগম। ২৬ এপ্রিল হাজেরা বেগমকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই শতাংশ জমিও একটি ঘর দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
হাজেরা বেগম বলেন, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর কিছুদিন মা-বাবার আশ্রয়ে ছিলেন। তাঁরা মারা গেলে সেই আশ্রয়ও হারাতে হয়। কোথায়ও ঠাঁই না পেয়ে আত্মীয়স্বজনের রান্নাঘর, কাছারিঘরের মেঝেতে থেকেছেন বছরের পর বছর। ছেলে গ্রামে ভ্যান গাড়ি চালিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়েও সংসার চলত না। একসময় ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পাতেন। আবার তাঁকে নামতে হয় রাস্তায়, বেঁচে থাকার তাগিদে করতে হয় ভিক্ষাবৃত্তি। প্রতিটি ঈদ কাটিয়েছেন মানুষের বাড়িতে। সরকারের দেওয়া এবারই প্রথম নিজের ঘরে ঈদ উদ্যাপন করলেন। আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সরকার কি সহায়তা দিয়েছেন সে বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃরোকনুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারের ত্রান দুর্যোগ ব্যাবস্হাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় কোন সাহায্য আসলে আমরা প্রথমেই আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের কথা চিন্তা করি,এছাড়া জি আর এর চাল,গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ৪০ দিনের কর্মসূচীতে তাদের অন্তর্ভুক্তকরন সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে।আশ্রয়ন প্রকল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মোরেলগঞ্জে গত এপ্রিল মাসে সরকারের পক্ষ থেকে ২০৬ টি ঘর হস্তান্তর করেছি, বাকি ঘর এখন নির্মানাধীন।মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের জৈস্ঠ্য এ কর্মকর্তা আরো বলেন আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত বাসিন্দাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসংস্হানের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে,ঈদ উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে চাল দেয়া হয়েছে, এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আসা যে কোন সাহায্য তাদের পৌঁছে দেওয়া হয়।তারা যাতে নিজেরাই নিজেদের কর্মক্ষম করে তুলতে পারে সেজন্য তাদেরকে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋন সহায়তা প্রদান করা সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য গত ২৬ এপ্রিল মোরেলগঞ্জে ২০৬টি ভূমিহীন পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করেছেন উপজেলা প্রশাসন। তাঁদের প্রত্যেককে দুই শতাংশ করে জমি দলিল করে দেওয়া হয়েছেপ্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ভুমিহীনদের এই ঘর ও জমির দলিল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল।