কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ ট্রেনের টিকিট নিয়ে জনভোগান্তি চরমে উঠলেও গুরুত্ব দিচ্ছিল না কর্তৃপক্ষ। কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনে ট্রেনের টিকিট নিয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়ে ভুক্তভোগীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হলে এগিয়ে আসে কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ। অবশেষে তাদের তৎপরতায় মিলন ও আহসান নামে টিকিট কালোবাজারির দুই সদস্যকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকালে কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
ডিবি পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন দুইজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটক মিলন রেল স্টেশন সংলগ্ন কালে এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। আর আহসান খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন মেসার্স মাহি ট্রেডার্সের সত্ত¡াধিকারী ও একই এলাকার বাসিন্দা।
কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন এলাকার বাসিন্দা ও রেল আন্দোলন নেতা আব্দুল কাদের জানান, টিকিট কালোবাজারিদের অপতৎপরতায় সাধারণ যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাচ্ছিলেন না। লাইনের শুরুতে সিন্ডিকেট করে কালোবাজারি ও তাদের প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে আগেই সব টিকিট কেটে নিতো। তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ বেশি দামে টিকিট নিতে বাধ্য হচ্ছিলেন যাত্রীরা। বিষয়টি নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হলেও প্রশাসন ও রেল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছিল না। পরে সাধারণ যাত্রীদের পক্ষ থেকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সহযোগীতা চাওয়া হয়। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে টিকিট কালোবাজারি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এমনকি সিন্ডিকেট ধরতে ছাত্রলীগ কর্মীরা যাত্রীর বেশে টিকিট কাটতে আসেন। পরে বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রলীগের সহায়তায় ডিবি পুলিশ টিকিট কালোবাজারির দুই সদস্যকে আটক করে নিয়ে যায়।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও কুড়িগ্রামের প্রতি ভালোবাসার কারণে এ জেলার মানুষ আন্তঃনগর ট্রেনের সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু শক্তিশালী টিকিট কালোবাজারিদের একটি শীক্তশালী সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ মানুষ রেল যাত্রায় ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে। বিষয়টি ছাত্রলীগের নজরে আসলে ছাত্রলীগ তাদের অবস্থান থেকে জনভোগান্তি নিরসনে সহায়তা করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহমেদ বলেন, ‘ কুড়িগ্রামে আন্তঃনগর ট্রেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার। কিন্তু ট্রেনের টিকিট প্রাপ্তি নিয়ে যাত্রীরা বেশ ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন। বিশেষ করে ঈদ যাত্রায় এই ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি রেল আন্দোলন নেতা আব্দুল কাদের ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে আমরা টিকিট কালোবাজারি বন্ধে রেল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা চাই। আমাদের কর্মীরা মাঠে থেকে সিন্ডিকেট সদস্যদের চিহ্নিত করতে কাজ করে। পরে ছাত্রলীগের সহায়তায় টিকিট কালোবাজারির দুই সদস্যকে আটক করে ডিবি পুলিশ।’
‘ছাত্রলীগ জনগণের পাশে থেকে জনবান্ধব কাজ করতে চায়। সরকারের যেকোনও শুভ উদ্যোগ বিনষ্টের চেষ্টাকারীদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে ছাত্রলীগ সবসময় সহায়তা করবে।’ যোগ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি।
এদিকে টিকিটের স্বল্পতা ও কালোবাজারিদের হাতে টিকিট চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন মাস্টার সামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, ‘ ঈদে যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে। আমরা টিকিট দিতে হিমশিম খাচ্ছি এবং চাপ অনুভব করছি। এরমধ্যে যাত্রীদের বেশে কালোবাজারিরা টিকিট নিয়ে সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
রেল স্টেশন সূত্র জানায়, কুড়িগ্রাম রেল স্টেশন কাউন্টারে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের জন্য টিকিট বরাদ্দ মাত্র ৬০ টি। আর রংপুর এক্সপ্রেসের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২১ টি টিকিট। ফলে বরাবরই টিকিট সংকটে যাত্রী ভোগান্তি লেগে থাকে। এর মধ্যে কালোবাজারিদের তৎপরতায় এ ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।
রেল আন্দোলন নেতা আব্দুল কাদের বলেন, কালোবাজারিদের হাতে টিকিট বিক্রি বন্ধে প্রশাসনিক উদ্যোগ সহ কুড়িগ্রামের জন্য টিকিট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দ বাড়ালে কালোবাজারিও বন্ধ হবে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসন হবে।’
ডিবি পুলিশের এসআই আলাউদ্দিন জানান, আটক মিলন ও আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তাদের বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।