করোনার কারণে ভিসা বন্ধসহ অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মহীন কয়েক লাখ বাংলাদেশি। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সংকটে শ্রমবাজার।
মালদ্বীপ প্রবাসী আরিফুল ইসলাম জানান, আমাদের কাছে টাকা নাই। কোম্পানি বেতন দেয় না। দেশে যে যাবো; দেশে যাওয়ার পর কাজেরও কোনো নিশ্চয়তা নেই।’ এমন অনিশ্চয়তার মধ্যেই কাজ হারিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে তাকে।
করোনা ওলটপালট করে দিয়েছে আরিফুল ইসলামের মতো অসংখ্য বাংলাদেশির স্বপ্ন। প্রবাসে কাজ হারিয়ে অনেকেই পাচ্ছেন না আর টিকে থাকার বল। যারাও বা রয়েছেন, বেকার হয়ে অর্থাভাবে বিষাদময় এক একটি দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে তো মহামারি শুরুর আগেই দেশে আসেন, এখন ফেরার পথে অকূল পাথার।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমে, ১ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে নেমে যেতে পারে। এই আয় গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও মিলেছে একই আভাস। কোভিড-নাইনটিনে তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এ অবস্থায় লাভবান হবে বলে মত বিশ্লেষকদের।
রামরুর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সিকদার বলেন, বাজার ঠিক আগের মতো চালু হবে না। দু’বছরের মতো এভাবে চলতে পারে। শ্রমবাজারে লোকের দরকার পরলে চাকরিদাতারা করোনায় কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দিকে ঝুঁকবে; ঝুঁকি কমোনোর জন্য। এক্ষেত্রে তাদের নজর থাকতে পারে নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং ভিয়েতনামের দিকে।
তবে এখনই উদ্যোগ নিলে বিশ্ব শ্রম বাজারে আশার আলোও দেখছেন এই গবেষক। বলেন, করোনার আঘাত সামলে উঠার জন্য এখন বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়াবেন। এক্ষেত্রে খাদ্যের যোগান নিশ্চিতের জন্য কৃষিখাত সবচেয়ে বেশি প্রধান্য পাবে। স্বাস্থ্যখাতের গুরুত্ব যে কতোটা অপরিসীম তাতো আবারো সবাই অনুধাবন করতে পেরেছে। বিনিয়োগ বাড়বে এ খাতেও। এখন আমাদের দরকার বিশাল অংকের বিনিয়োগ হতে পারে এমন সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে টার্গেট করা। দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি বাজার খুঁজতে থাকা। প্রশ্ন হলো সে বাজার ধরার জন্য আমরা কতোটুকু প্রস্তুত?
পররাষ্ট্রমন্ত্রীও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যেসব প্রবাসী এখন বিদেশে আছেন, তাদের থেকে যাওয়া নিশ্চিত করা এবং নতুন করে চাহিদা মাফিক জনশক্তি পাঠানোর সব রকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন নতুন জায়গা খুঁজতেছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকায় বাজার তৈরির চেষ্টা চলছে। এতে সৃষ্টি হবে কয়েক লাখ নতুন কর্মসংস্থান। আফ্রিকাতে অনেকগুলো জায়গা পেয়েছি। যেখানে কৃষিখাতে সম্ভাবনা আছে।
সংকটকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে, দক্ষ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে দেশে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন, ফেরত আসা প্রবাসীদের দক্ষ হিসেবে ধরে নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি এবং অবৈধভাবে লোক পাঠানো রোধ করতে দালালদের প্রতিহত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিশেষজ্ঞরা।
উৎসঃ সময় নিউজ