রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে উদ্বোধন হলো দেশের সবচেয়ে বড় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল’। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার তোয়াক্কা করেননি কেউই। এমনকি স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার কোনও ব্যবস্থাও ছিল না।
হাসপাতালটির দ্বিতীয় তলায় আয়োজন করা হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। কিন্তু সেখানে গণমাধ্যমকর্মী, বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ক্যামেরাপারসন এবং ডিএনসিসি মার্কেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা সৃষ্টি হয়। ডিএনসিসি’র অনেক কর্মীর মুখে মাস্ক ছিল না। ছবি তুলতে গেলে তড়িঘড়ি মাস্ক পরতে দেখা গেছে তাদের। দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। চিকিৎসকরা এখনকার পরিস্থিতিকে বলছেন করোনার সুনামি। সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও।
মাস্ক পরা, তিন ফুট থেকে ছয় ফুট দূরত্ব মেনে চলাই যেখানে সংক্রমণ রোধের একমাত্র উপায়, সেখানে এভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা নিতান্তই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বলে মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এমনকি ভিড়ের কারণে গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকেই মূল অনুষ্ঠানস্থলের সামনে যেতে পারেননি।
এই ভিড়ের ভেতরে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হবো নাকি—মন্তব্য করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, সারা দেশে যেখানে ভার্চুয়ালি সব অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেখানে কেন এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে হলো।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনও বালাই ছিল না
অনলাইন নিউজপোর্টাল সারাবাংলা ডটনেটের স্বাস্থ্য বিষয়ক সাংবাদিক সৈকত ভৌমিক বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না গেলে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রোগ্রাম কাভার করবে না, এমন একটা ঘোষণা আসা উচিত সাংবাদিক নেতাদের কাছ থেকে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু যেকোনও পরিস্থিতিতে কাজ করে যেতে হবে গণমাধ্যমকর্মীদের, এটাও একটা বিষয়। কাজ করতে তো কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমার বা আমাদের সহকর্মীদের কারও কিছু হলে, তার দায় কে নেবে?’
‘একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমিও গিয়েছিলাম হাসপাতালটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না দেখে সামনের দিকে আর যাইনি’, বলেন সৈকত ভৌমিক। বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সাংবাদিক বলেন, বেশিরভাগ অনুষ্ঠানেই এই সমস্যা হচ্ছে। আয়োজকরা ক্যামেরাপারসনদের ছবি তোলার জন্য আলাদা জায়গা রাখেন না। অনেক অনুষ্ঠানে সামনে সারি সারি চেয়ার পেতে রাখেন। পেছন থেকে শুনতে হয় দেখি না দেখি না, সরেন। অথচ দুই পাশে চেয়ার রেখে মাঝখানে অল্প একটু জায়গা যদি ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলেই ক্যামেরাপারসনরা সুন্দরভাবে ছবি তুলতে পারেন। গোড়ার সমস্যাটা সমাধান হওয়া উচিত। আয়োজকরা সদিচ্ছা আর একটু বুদ্ধি খাটালেই এই বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।
যেকোনও জায়গাতেই ভিড় এড়িয়ে চলার জন্য বলা হচ্ছে জানিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজেরাই যদি স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করে, তাহলে তারা তো জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলার নৈতিক অধিকার হারায়।’
এ অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্ট করা হয়। ফোন করেও তাদের পাওয়া সম্ভব হয়নি।