করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে সাত দিনের মধ্যে সুস্থ করতে সক্ষম দাবি করে নতুন একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ বাজারে ছেড়েছে ভারতের বিতর্কিত ধর্মপ্রচারক ও যোগগুরু রামদেবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পতঞ্জলি। ভাইরাসটির চিকিৎসায় কার্যকর ওষুধের খোঁজে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা মরিয়া প্রচেষ্টা চালালেও পতঞ্জলির দাবি, রোগীদের ওপর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় তাদের নতুন ওষুধ শতভাগ ইতিবাচক ফলাফল দিয়েছে।
রামদেবের দাবি, গবেষণার মাধ্যমে তৈরি ‘করোনিল ও স্বসারি’ নামের ওষুধটি ভারতের বিভিন্ন স্থানের ২৮০ জন রোগীর ওপর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনও গ্রহণযোগ্য প্রতিষেধক কিংবা ভ্যাকসিন নেই। বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন টিকা-ওষুধ, প্ল্যাজমা থেরাপি কিংবা অ্যান্টিবডি নিয়ে পরীক্ষা চলমান রয়েছে। তবে এই মহামারি শুরুর পর থেকে বেশ কয়েক দফায় করোনার ওষুধ বাতলে দেওয়ার দাবি করেছেন রামদেব।
এপ্রিলে রামদেব দাবি করেন, নাক দিয়ে সরিষার তেল দিলেই নাকি মরে যাবে করোনা। আবার এই মাসের শুরুতে তিনি বলেন, অশ্বগন্ধা আর গুলঞ্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে পারে। মঙ্গলবার ‘করোনিল এবং স্বসারি’ নামে করোনার ওষুধ প্রচলন করে রামদেব বলেন, ‘সারা দেশ এবং পুরো বিশ্ব করোনার ওষুধ কিংবা টিকার অপেক্ষা করছে। প্রথম আয়ুর্বেদিক ওষুধের ঘোষণা দিতে পেরে আমরা গর্বিত। পতঞ্জলি রিসার্চ সেন্টার এবং এনআইএমএস’র (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ম্যাটেরিয়াল সাইন্স) যৌথ প্রচেষ্টায় নিয়ন্ত্রিত ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাভিত্তিক প্রমাণ এবং গবেষণা শেষে ওষুধটি প্রস্তুত করা হয়েছে।’
রামদেব বলেন, ‘আমরা আজ কোভিড ওষুধ করোনিল এবং স্বসারি চালু করছি। এর দুইটি পরীক্ষা চালিয়েছি, প্রথম ক্লিনিক্যাল গবেষণা হয়েছে দিল্লি, আহমেদাবাদসহ বেশ কয়েকটি শহরে। এই পরীক্ষার অধীনে থাকা ২৮০ জন রোগীর সবাই সুস্থ হয়েছেন। আমরা এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস এবং এর জটিলতাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।’
এই প্রকল্পে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস বা জয়পুরের এনআইএমএস বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কাজ করেছে পতঞ্জলি।
রামদেব বলেন, জয়পুরের এনআইএমএস’র সহায়তায় আমরা ৯৫ জন রোগীর ওপর দ্বিতীয় ক্লিনিক্যাল গবেষণা চালিয়েছি। তিন দিনের মধ্যে ৬৯ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে । সাত দিনের মধ্যে ১০০% মানুষই করোনা-নেগেটিভ হয়ে গেছে। রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে বিকল্প ওষুধে করোনা নিরাময়ের দাবি নিয়ে শুরু থেকেই সতর্ক করে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাটি বলেছে, ‘কিছু পশ্চিমী, ঐতিহ্যবাহী বা ঘরোয়া প্রতিকারে আরাম মিলতে পারে এবং কোভিড-১৯ এর লক্ষণগুলি হ্রাস পেতে পারে, তবে এমন কোনও প্রমাণ নেই যে সেসব ওষুধ এই রোগ প্রতিরোধ কিংবা নিরাময় করতে পারে।’