কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের উলিপুরে চাঁদাবাজি ও অটো চুরির অভিযোগে পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ ৫জনের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী এক অটো চালক। মামলার আসামীরা দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নামে অভিনব কৌশলে উপজেলার কয়েক হাজার অটোচালকের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের জুম্মাহাট গ্রামের রাশেদুল ইসলাম পেশায় একজন অটো চালক। তিনি উলিপুর বাজারে অটো নিয়ে আসলে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের সহায়তায় উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক মুকুল মিয়া (৩৬) ও পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি সোহেল খাঁ (৩৫)সহ কয়েকজন মিলে তার ও অন্যান্য অটোচালকের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে চাঁদা নিয়ে আসছিলেন।
তিনি মামলায় আরও উল্লেখ করেন, এক বছর পূর্বে তার কাছ থেকে উপরোক্ত ব্যক্তিগণ ৫ হাজার ২শ টাকা চাঁদা আদায় করেন। গত ৩১ আগষ্ট পূণরায় আসামীরা তার কাছে ১হাজার ৫০ টাকা চাঁদা দাবী করেন। তিনি বার বার চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে মারধর করে তার অটোগাড়িটি তারা নিয়ে যান। এ ঘটনায় তিনি মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিকালে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ শ্রমিকলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ অটো গাড়ি চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-০১)। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই দিন পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি সোহেল খাঁ ও তার সহযোগী ফরহাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেন।
অটোচালক শামছুল আলম (৪০), মক্কেল আলী (২৯), উমর ফারুক (৩৭), আরিফুল ইসলাস (৪১), লাভলু সরকার (৪০)সহ অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নামে অভিনব কৌশলে উপজেলার প্রায় ৩ হাজার অটোচালকের কাছ থেকে গাড়ির নাম্বার প্লেট বাবদ ৫ হাজার ২শ টাকা করে আদায় করা হয়। এভাবে অটোচালকদের কাছ থেকে এককালীন প্রায় ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা আদায় করে নেন। এছাড়া ওইসব অটো নবায়নের জন্য প্রতি বছর ১ হাজার ৫০ টাকা করে প্রায় ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন। এভাবে দশ বছরে প্রায় ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা নেয়া হয়। পক্ষান্তরে প্রতিদিন ওই সংগঠনের নামে অটোপ্রতি ১০ টাকা করে প্রায় ৩০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়। এভাবে মাসে ৯ লক্ষ ও বছরে প্রায় ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা আদায় করে নিয়েছেন ওই নেতারা। ১০ বছরে দৈনিক চাঁদার মোট ১০ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা আদায় করে নিয়েছেন তারা। ক্ষমতাসীন দলের দাপট দেখিয়ে গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির নামে তারা সর্বমোট প্রায় ১৫ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অটো চালক অভিযোগ করে বলেন, এই চক্রটি অটো চালকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে জোর পূর্বক চাঁদাবাজি করে আসছেন। একটি নতুন অটো ক্রয় করতে খরচ হয় দেড় লাখ টাকা কিন্তু তা রাস্তায় চালাতে ওই সংগঠনের নামে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। উপজেলা সদর থেকে রাজারহাট সড়ক, মাঝবিল সড়ক, অনন্তপুর সড়ক, ফকিরেরহাট সড়ক, বজরা ও থেতরাই সড়কসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অটো সিরিয়াল মোতাবেক চালাতে হলে ওই সংগঠনকে অটোপ্রতি ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদা আদায়ের জন্য নেতারা গড়ে তুলেছেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী। চাঁদা না দিলে ক্যাডাররা মারধরসহ অটোর ব্যাটারি, সীট, স্পেয়ার চাকা খুলে নেয়। এভাবেও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই নেতারা।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটির মূলহোতা জাহাঙ্গীর আলম, মুকুল মিয়া ও সোহেল খাঁ কিন্তু তারা অটোচালক বা মালিক নন। তারা সংগঠনের নাম করে এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে দরিদ্র অটোচালকদের জিম্মিকরে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে আসলেও ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পেত না।
উলিপুর থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অটো চালকদের কাছে কেউ চাঁদা দাবী করলে তা থানায় জানানো হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।
উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, অবৈধভাবে দরিদ্র অটোচালকদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া অন্যায়। তা থেকে বিরত থাকার জন্য এমপি মহোদয়, আমি নিজে ও থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার নিষেধ করা হয়েছে। এটা দলীয় কোন কার্যক্রম নয়, এটা ব্যক্তিগত বিষয়। মামলার ব্যাপারে আমাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই। আওয়ামীলীগ কখনই চাঁদাবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না।