করোনা মহামারীর মধ্যে কেবল সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) ও ইতালি থেকে রেমিট্যান্স আসা কমেছে। বেড়েছে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরসহ অন্য শীর্ষ দেশগুলো থেকে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের প্রবাসী আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষ অবস্থানে ছিল মালয়েশিয়া। এই দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৪.৪০ শতাংশ। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে ৫২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। সিঙ্গাপুর থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪০.৪০ শতাংশ।
এছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে ৩৫ শতাংশ, ওমান থেকে প্রায় ৩১ শতাংশ, কুয়েত থেকে প্রায় ২৬ শতাংশ ও কাতার থেকে ২১.৫০ শতাংশ রেমিট্যান্স বেড়েছে। তবে আলোচ্য আট মাসে দুবাই থেকে রেমিট্যান্স আসা ২ শতাংশ কমেছে। ইতালি থেকে রেমিট্যান্স আসা কমেছে শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও টাকার অঙ্কের দিক দিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৯৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৮ কোটি ডলার। আলোচ্য আট মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২১৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৫৩ কোটি ডলার। দুবাই থেকে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৭১ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ছিল ১৭৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮৭ কোটি ডলার।
আলোচ্য সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে ১৩৩ কোটি ডলার, কুয়েত থেকে ১২৫ কোটি ডলার, ওমান থেকে ১০৬ কোটি ডলার, কাতার থেকে প্রায় ৯০ কোটি ডলার, ইতালি থেকে ৫৪ কোটি ডলার ও সিঙ্গাপুর থেকে ৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে।
এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে মোট ১৮৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসীরা।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে মোট ১ হাজার ৬৬৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। মার্চে আরও ১৯১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসায় অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেমিট্যান্স দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৬০ কোটি ডলারে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের এই প্রবৃদ্ধি গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অনেক অর্থনীতিবিদ অবশ্য এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন। তাদের ধারণা, প্রবাস থেকে ফেরত চলে আসতে হবে দেখে অনেকেই তাদের সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অনেকে ঘটিবাটি বিক্রি করে টাকা পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘করোনা মহামারীর শুরুর পর সারা বিশ্ব থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের যার যার দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় প্রায় ২-৩ লাখ শ্রমিক দেশে চলে আসে। অনেকে লকডাউনে আটকা পড়ে। কাজ হারিয়ে সঞ্চয় ভেঙে খেতে হয়েছে। এরপরও রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হতে পারে অনেকেই বিদেশে আর থাকা হবে না- এই ভেবে হয়তো তাদের সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘সরকার ঘোষিত দুই শতাংশ প্রণোদনা রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো আগের থেকে সহজ ও দ্রুততর হয়েছে। ফলে রেমিট্যান্সের এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।’
এছাড়া অনেক ব্যাংক দুই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে আরও এক শতাংশ প্রণোদনা যোগ করায় সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্স বেড়েছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা।
উৎসঃ দেশ রূপান্তর