প্রেগনেন্সি গ্লো এর কথা আমরা সবসময় শুনে থাকি। কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ হবু মা-ই হরমোনাল নানা রকম পরিবর্তনের কারণে ত্বকের নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হন। যার মধ্যে অন্যতম হলো স্কিন ড্রাই হয়ে যাওয়া, হরমোনাল ব্রেকআউট বা ব্রণ, অনেকের মেলাজমা অর্থাৎ মেছতা হয়ে থাকে যেটার কারণে দেখা যায় মুখে কালো কালো ছোপ পড়ে। এসব কারণে একটা স্কিন কেয়ার রুটিনের মধ্যে এ সময়টা থাকা জরুরি। কিন্তু সমস্যা হলো, প্রেগন্যান্সির এই সময়টা খুবই সেনসিটিভ। আপনার ভেতরে একটু একটু করে গড়ে উঠছে একটা মানুষ, আপনি যা খাচ্ছেন, যা ব্যবহার করছেন সবকিছুই তার উপর প্রভাব ফেলছে। তাই অন্য সময়ের মতো যেকোনো প্রোডাক্টই এই সময়ে ব্যবহার করা যাবে না।
আপনার স্কিন কেয়ারের প্রোডাক্টগুলোতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলো প্রেগন্যান্সি সেইফ কিনা এই বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যদিও আমাদের স্কিনের ব্যারিয়ার লেয়ার আমাদের চামড়া রয়েছে, তবুও অনেক উপাদান রয়েছে যা এই লেয়ারকে ভেদ করে আমাদের রক্তে প্রবেশ করতে পারে এবং সেগুলো প্লাসেন্টা হয়ে আপনার গর্ভের বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করলে তৈরি করতে পারে বার্থ ডিফেক্ট সহ নানারকমের প্রতিবন্ধকতা। তাই চলুন আজ জেনে নেয়া যাক গর্ভাবস্থায় নিরাপদ ত্বকের যত্ন নিতে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে?
গর্ভাবস্থায় নিরাপদ ত্বকের যত্ন নিতে ১০টি টিপস
প্রতিদিনই বাজারে আসছে হরেক রকম নতুন প্রোডাক্ট তবে এগুলো একটু ঘেটে দেখলে বোঝা যায় একই ধরনের উপাদানের বিভিন্ন মাত্রার মিশ্রণ দিয়ে মূলত ভিন্ন ভিন্ন নামে এগুলো বাজারজাত হয়। বিশেষ কিছু উপাদানের ব্যাপারে সচেতন থাকলেই তাই যেকোন ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। যেই ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলো-
১) ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন
কেমিক্যাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যাবে না, ব্যবহার করুন ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন। এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎ এই যে কেমিক্যাল সানস্ক্রিন কাজ করে আমাদের স্কিনের ভেতরে প্রবেশ করে, যেখানে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন স্কিনের উপরে একটি লেয়ার তৈরি করে বসে থাকে। মূলত যেসব সানস্ক্রিনের মূল উপাদান জিংক অক্সাইড ও টাইটেনিয়াম অক্সাইড সেগুলো ব্যবহার করা সেইফ।
২) রেটিনয়েডস
রেটিনয়েডস ব্যবহার করা একদম নিষেধ। রেটিন এ/একুটেন, রেটিনয়েডস, ভিটামিন এ – এই সবগুলোই প্রেগনেন্সিতে অনিরাপদ ধরা হয়। গবেষণায় এগুলোকে নানারকমের বার্থ ডিফেক্টের কারণ হিসাবে পাওয়া গিয়েছে। রেটিনয়েডস ভিটামিন এ থেকে পাওয়া যায় বলে ভিটামিন এ স্কিনে ব্যবহার ও এভয়েড করতে বলা হয়ে থাকে। তবে ভিটামিন এ থেকে পাওয়া বেটা-ক্যারোটিনকে সেইফ ধরা হয়।
৩) হাইড্রো-অক্সি এসিডসমূহ
ইদানিং কালে হাইড্রো-অক্সি এসিডের ব্যবহার স্কিন কেয়ারে ভীষণভাবে দেখা যায়। এরা এএইচএ, বিএইচএ, পিএইচএ (AHA, BHA, PHA) নামে স্কিন কেয়ারে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এদের সবগুলোই মূলত প্রেগনেন্সিতে এড়িয়ে চলতে বলা হয়। এর মধ্যে ব্যতিক্রম হলো ল্যাকটিক এসিড। যেহেতু এটি আমাদের শরীরে এমনিতেই প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয়, তাই এটি ব্যবহার করা যায়। অনেকে বলে থাকেন গ্লাইকোলিক এসিডও ব্যবহার করা সেইফ। কিন্তু এটিকে সেইফ বলার জন্য যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ না থাকায় এটিও এভয়েড করে যাওয়াই ভালো। অনেক স্কিন কেয়ারে ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্টের নিচের দিকে সাইট্রিক এসিড থাকে, যার মানে হলো খুবই সামান্য পরিমাণে তা আছে। আর এই সামান্য পরিমাণ সাইট্রিক এসিড ব্যবহার করা হয় মূলত পিএইচ ব্যালেন্স (pH balance) ঠিক রাখার জন্য। তাই এগুলো ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।
৪) স্যালিসাইলিক এসিড
এটি অ্যাকনে ট্রিটমেন্টে ব্যবহার করা হয়। তবে এটি প্রেগনেন্সিতে ব্যবহার করা যাবে না। যেকোনো স্যালিসাইলেটস ও ব্যবহার করা যাবে না যার মধ্যে ট্রপিক্যাল উইলো বার্ক ও রয়েছে।
৫) ত্বক উজ্জ্বল করা উপাদান
হাইড্রোকুইনন, আলফা আরবুটিন, লাইকোরাইস রুট, কোজিক এসিড এগুলোও প্রেগনেন্সিতে ব্যবহার না করতে বলে থাকেন বিশেষজ্ঞগণ।
৬) স্নেইল সিক্রেশন
বেনজোয়েল পার-অক্সাইড এবং স্নেইল সিক্রেশন প্রেগনেন্সিতে ব্যবহার না করাই উত্তম।
৭) প্যারাবেন
এমনিতেই প্যারাবেন আমরা এভয়েড করতে বলে থাকি। কিন্তু এটি প্রেগনেন্সিতে আলাদা করে কোন রিস্ক বহন করে না। তবে যেকোনো সময়ই প্যারাবিন ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করাই উত্তম।
৮) হাইলুরোনিক এসিড/সোডিয়াম হ্যালুরোনেট
প্রেগনেন্সিতে যেই এসিডটি ব্যবহার করা যাবে এবং যেটি স্কিন হাইড্রেশনে খুব ভালো কাজ করে তাহলো হাইলুরোনিক এসিড/সোডিয়াম হ্যালুরোনেট। হাইলুরোনিক এসিডের মলিক্যুল অনেক বড় আকারের বলে এটি স্কিনকে ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করে না। তাই এটি ব্যবহার করা সেইফ। তবে কোন কোম্পানি যদি ক্লেইম করে যে তাদের প্রোডাক্টের হাইলুরোনিক এসিড স্কিন পেনেট্রেট করে ভেতরে গিয়ে কাজ করে তাহলে সেই প্রোডাক্টটি এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ সেক্ষেত্রে এই এসিডটি আমাদের রক্ত বাহিকায় চলে গিয়ে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
৯) অ্যাসেনশিয়াল অয়েল
অ্যাসেনশিয়াল অয়েলগুলোর মধ্যে উইলো বার্ক এবং নিম বাদে বাকিগুলো অল্প মাত্রায় ব্যবহার করা সেইফ। তবুও এসেনশিয়াল ওয়েল বা এক্সট্রাক্টগুলো অনেকেই এই সময়ে এভয়েড করতে বলে থাকেন।
১০) যা করা যাবে না
সানলেস ট্যানিং (DHA), লেজার থেরাপি, বোটক্স, ফিলার, স্টেম সেলস/ গ্রোথ ফ্যাক্টরস এগুলোও প্রেগনেন্সিতে করানো যাবে না।
প্রেগনেন্সিতে স্কিন বেশিরভাগ সময়ই অনেক সেনসিটিভ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক প্রোডাক্ট প্রেগনেন্সি সেইফ হলেও তা ত্বকে ইরিটেশন বা লালচে ভাব তৈরি করতে পারে। এমনটা হলে সেই প্রোডাক্ট ব্যবহার না করাই উত্তম। যেকোনো প্রোডাক্ট কেনা বা ব্যবহারের আগে তার লেবেলে লেখা উপাদানের লিস্টটি নিজে চেক করে মিলিয়ে নিবেন সেটি ব্যবহার করা আপনার গর্ভের বাচ্চার জন্য নিরাপদ হবে কিনা। ব্রেস্টফিডিং পিরিয়ডে এসব প্রোডাক্ট রেস্ট্রিকশন বেশিরভাগই না থাকলেও এই সময়েও অনেক উপাদান ব্যবহার করা নিষেধ থাকে। এই বিষয়ে ভবিষ্যতে অন্য পোস্টে আলাপ করবো। আপনি বিশেষ কোন প্রোডাক্টের সেইফটি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই পোস্টে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যথা সম্ভব সঠিক তথ্য দিয়ে আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো। সুন্দর এবং নিরাপদ কাটুক হবু মায়েদের দিনগুলো।