এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)–এর বৈঠকে সমঝোতা না হওয়ায় আগামী বুধবার বন্দর অবরোধ কর্মসূচি বহাল রেখেছে সংগঠনটি। সোমবার সকালে বন্দর ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বন্দরের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদ, সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ ও সচিব ওমর ফারুক। স্কপের পক্ষে অংশ নেন তপন দত্ত, কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার, এস. কে. খোদা তোতনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত নয়। বন্দর চেয়ারম্যান ছুটিতে থাকায় নভেম্বরে কোনো চুক্তির সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তারা। পাশাপাশি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে কৌশলগত কোনো চুক্তি করার সুযোগ থাকবে না বলেও তারা বৈঠকে তুলে ধরেন।
অন্যদিকে স্কপ নেতারা অভিযোগ করেন, বিডার প্রধান নির্বাহী আশিক চৌধুরীর ‘এনসিটি চুক্তি সাত দিনের মধ্যে হবে’—এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি করার নৈতিক ও আইনি অধিকার নেই। এ কারণে গত ৬ মাস ধরে চলমান আন্দোলন স্থগিতের কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তারা।
স্কপ জানায়, বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হালিশহর টোল প্লাজা, বড়পুল ও মাইলের মাথা এলাকায় বন্দর অবরোধ চলবে।
আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার বন্দর রক্ষা পরিষদের
অপরদিকে একই দিন সন্ধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবরোধ কর্মসূচি দুই দিনের জন্য স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা পরিষদ। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমী জানান, সিসিটি ও এনসিটিতে শ্রমিকদের স্বার্থহানি হবে—এমন কোনো সিদ্ধান্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ নেবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে। তাই আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বড়পুল, আগ্রাবাদ ও সিম্যান্স হোস্টেল এলাকায় অবরোধ ঘোষণার কথা জানিয়েছিল সংগঠনটি।
বন্দর রক্ষা পরিষদের সদস্যসচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, দুপুরে বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে কোর্টে পরদিনের শুনানির কথা বিবেচনায় অবরোধ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন তিনি। তবে আন্দোলন পর্যবেক্ষণে সতর্ক থাকার কথাও জানান তারা।
দুই সংগঠনের পৃথক অবস্থানঃ
বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে স্কপের প্রতিনিধি দল জানায়, ইজারা চুক্তি নিয়ে বন্দরের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত নিশ্চয়তা না পাওয়ায় তারা কর্মসূচি স্থগিত করতে রাজি নন। নেতা তপন দত্ত বলেন, “বৈঠকে কোনো ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই পূর্ব ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি বহাল থাকবে।”
অপরদিকে বন্দর রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমী বলেন, “বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আপাতত এনসিটি ও সিসিটি ইজারা প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না—এই নিশ্চয়তায় আমরা কর্মসূচি স্থগিত করেছি।”
বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কমডোর কাওছার রশিদ বলেন, “বন্দর চলমান রাখতে হবে—এ বিষয়েই দুই পক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।”
