ইথিওপিয়ার হাইলি গুবি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে নির্গত ছাই ও সালফার ডাই–অক্সাইড গ্যাস আগামী কয়েক দিনে ইয়েমেন ও ওমানের কিছু অঞ্চলে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছেন আমিরাতের খ্যাতনামা জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইব্রাহিম আল জারওয়ান। সোমবার এমারাত আল ইউম–এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
এমিরেটস অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির বোর্ড চেয়ারম্যান এবং আরব ইউনিয়ন ফর স্পেস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমি সায়েন্সেস–এর সদস্য আল জারওয়ান বলেন, বর্তমান পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আগ্নেয় ছাইয়ের ঘন মেঘ পূর্ব–উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা আরব উপদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে।
দিনের শুরুতেই খালিজ টাইমস জানায়, ওমান এনভায়রনমেন্ট অথরিটি আগ্নেয়গিরির গ্যাস ও ছাই নির্গমনের বিষয়ে একটি পরামর্শ জারি করেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় সাময়িকভাবে ওমানের বায়ুর মানে প্রভাব পড়তে পারে, যদিও তাদের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় এখন পর্যন্ত দূষণ বৃদ্ধির কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
আল জারওয়ান আরও জানান, দীর্ঘ কয়েক হাজার বছর সুপ্ত থাকা হাইলি গুবি আগ্নেয়গিরিতে ২৩ নভেম্বর, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা (জিএমটি) থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলের গ্রেট রিফট ভ্যালিতে অবস্থিত এ আগ্নেয়গিরিটি প্রায় ১০ হাজার বছর পর জেগে উঠেছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্টি হওয়া ছাইয়ের ঘন স্তম্ভ আকাশে ১০ কিলোমিটারের বেশি উচ্চতায় উঠে গেছে, যা আঞ্চলিক মনিটরিং প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। ছাইয়ের মেঘ লোহিত সাগর অতিক্রম করে ইয়েমেন ও ওমানের দিকে এগোচ্ছে।
এই অগ্ন্যুৎপাত সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। সূক্ষ্ম আগ্নেয় ছাই বিমান ইঞ্জিন, দৃশ্যমানতা ও ন্যাভিগেশন ব্যবস্থায় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে—এ কারণে ভোলকানিক অ্যাশ অ্যাডভাইসরি সেন্টার (ভিএএসি) গুলো বিভিন্ন সতর্কতা জারি করেছে। কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের আগ্নেয়গিরির আশেপাশে না যাওয়ার এবং দূষিত বাতাস শ্বাস নেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অগ্ন্যুৎপাত ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। আফ্রিকার রিফট ভ্যালিতে ভূ-পৃষ্ঠের সরে যাওয়া ও পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাত ঘটতে পারে। যদিও অগ্ন্যুৎপাত কিছুটা কমেছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্ড আগ্নেয়গিরিগুলোতে মাঝে মাঝে পরবর্তী বিস্ফোরণ দেখা দিতে পারে, তাই নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জরুরি।
আল জারওয়ান বলেন, ভেসে আসা ছাই ও সালফার ডাই–অক্সাইড ইয়েমেন ও ওমানের কিছু অঞ্চলে বায়ুর মান কমিয়ে দিতে পারে। এতে বাসিন্দাদের চোখে বা শ্বাসযন্ত্রে জ্বালাপোড়া হতে পারে। বাতাসে আর্দ্রতা থাকলে এ গ্যাসের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে হালকা অ্যাসিড–বৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
ভিএএসি টুলুজের তথ্য অনুযায়ী, ছাই–মেঘ পূর্ব–উত্তরপূর্ব দিকে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ সীমানার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ছাইয়ের গতিপথ নজরদারি করছে, কারণ বাতাসের দিক পরিবর্তন হলে এ প্রভাব আরও বিস্তৃত হতে পারে।
