অবশেষে সিডিএ ছাড়লেন নির্বাহী প্রকৌশলী শামস

এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রাম: দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর বদলি হলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তাকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে বদলি করে গত ২০ নভেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখা-৪ আদেশ জারি করেছে। সিনিয়র সহকারী সচিব আম্বিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত আদেশে ২৩ নভেম্বরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিডিএও পরদিন পৃথক অফিস আদেশে শামসকে ২৩ নভেম্বর অপরাহ্ণ থেকে অবমুক্ত ঘোষণা করে।

একাই ধরে রাখেন আটটি পদঃ সূত্র জানায়, কাজী হাসান বিন শামস নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বরত থাকলেও দীর্ঘ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (১–২), প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (ভারপ্রাপ্ত), বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালকসহ মোট আটটি দায়িত্ব তিনি একাই ধরে রেখেছিলেন। তার নেতৃত্বে আউটার রিং রোডের মতো মেগা প্রকল্পও বাস্তবায়িত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি মন্ত্রণালয় ও রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে এসব অতিরিক্ত পদে বহাল ছিলেন। বিভিন্ন নকশা অনুমোদন, ছাড়পত্র, আর্থিক নথি প্রক্রিয়াকরণ ও প্রকল্প অনুমোদনে অনিয়ম এবং ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার প্রয়াসে জালিয়াতি? ১০ নভেম্বর উচ্চ আদালতে প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়মিত পদোন্নতির দাবিতে রিট করেন কাজী হাসান বিন শামস। তবে সিডিএর দাবি—রিটের সঙ্গে জমা দেওয়া দুই আবেদনপত্রে অসত্য তথ্য দেওয়া হয়েছে।

২০১৯ এবং ২০২৪ সালের দুই আবেদনে তিনি ২১ বছর ধরে সিডিএতে কর্মরত থাকার কথা উল্লেখ করেছেন—ছয় বছরের ব্যবধানেও একই কর্মজীবন দেখানো হয়েছে, যা সিডিএর ভাষায় ‘স্পষ্ট অসত্য তথ্য’। সিডিএ আরও জানায়, আবেদনপত্রে দেখানো গ্রহণকারীর স্বাক্ষর অফিসের রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না।

প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই, মামলাও গোপনঃ সিডিএ চেয়ারম্যানের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু শামসের মূল পদ নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়ায় এই শর্ত পূরণ হয়নি। এ ছাড়া তার নামে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের পাঁচটি মামলা চলমান রয়েছে, যা রিটে গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ সিডিএর।

ট্রুথ কমিশনে দোষ স্বীকারঃ ২০০৮ সালে সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশনে (ট্রুথ কমিশন) অক্সিজেন-কাপ্তাই রোড প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করেন এবং তিন লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেন। কমিশন তাকে মার্জনা দিলেও দুদকের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি মেলেনি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চার্জশিটভুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত বা শাস্তির বিধান থাকলেও কাজী হাসান বিন শামস এ প্রক্রিয়ার আওতায় আসেননি।

১৬ বছরে ৪৪টি রিটঃ সিডিএর একটি সূত্র জানায়, গত ১৬ বছরে নিজের পদ রক্ষায় তিনি মোট ৪৪টি রিট পিটিশন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে—এসব রিটেও অসত্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।সি

ডিএ চেয়ারম্যান যা বললেনঃ সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, “মামলাধীন বিষয়ে সিডিএ ব্যবস্থা নিতে পারে না। মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগ বিষয়টি দেখছে। মামলার রায় হলে সিডিএ পদক্ষেপ নেবে।”

কাজী হাসান বিন শামসের ফোনে একাধিকবার কল ও মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

Facebook Comments Box
Share: