মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায়ের দিন ১৭ নভেম্বর

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের রায়ের দিন নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আগামী ১৭ নভেম্বর ধার্য করেন।

এদিন আদালত বসার শুরুতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, মামলাটি রায়ের দিন নির্ধারণের জন্য তালিকাভুক্ত রয়েছে। পরে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান রায়ের দিন ১৭ নভেম্বর (সোমবার) নির্ধারণ করেন। রায় ঘোষণার দিন ঠিক হওয়ার সময় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে দেশি-বিদেশি অসংখ্য সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের দিন ঘোষণার পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “মামলার বিচার নিয়ে কোনো ধোঁয়াশার সুযোগ নেই। আদালতে খোলামেলা বিচার হয়েছে, আমরা সব প্রমাণ ও তথ্য উপস্থাপন করেছি। আশা করি আসামিরা সর্বোচ্চ দণ্ড পাবেন।”

অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, “প্রসিকিউশন প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছে, কোর্টে ন্যায়বিচারের পূর্ণ পরিবেশ ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, আসামিরা খালাস পাবেন।”

এর আগে এ রায়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে। গত কয়েকদিনে সারা দেশে সহিংসতা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি ‘প্রতিরোধ কর্মসূচি’ ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম এনটিভি অনলাইনকে জানান, “যারা দেশে নাশকতা করছে, তা প্রশাসনের বিষয়। প্রসিকিউশন কোনোভাবেই ভীত নয়।”

গত ২৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেছিল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম ও মিজানুল ইসলাম। আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এবং আদালতের আদেশে দোষ স্বীকারের শর্তে ক্ষমা পান।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম অভিযোগ হলো—শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতা নিহত ও ২৫ হাজার আহত হন। এছাড়া হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, রংপুরে ছাত্র হত্যাকাণ্ড, রাজধানীতে গুলি ও অগ্নিদগ্ধ করে হত্যার অভিযোগও রয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটি চতুর্থ মামলা। এর আগে আদালত অবমাননার একটি মামলায় তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

আসন্ন রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজধানীসহ সারাদেশে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আর ট্রাইব্যুনাল এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে বহুস্তরের নিরাপত্তা বলয়।

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *