এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম নিউ মার্কেট মোড়ে বিকাল ৪ টার আগে সড়ক ফুটপাতে কোন হকার বসবেনা, চসিক মেয়রের কঠোর ঘোষণা—‘নির্দেশনা না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা’
চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম নিউ মার্কেট মোড়ে বিকেল ৪টার আগে কোনো হকার বসলে উচ্ছেদ অভিযানসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে নিউ মার্কেট মোড় এলাকায় পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানের সময় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
মেয়র বলেন, ‘নিউ মার্কেট মোড় নগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে কেউ স্থায়ীভাবে ব্যবসা করতে পারবে না। বিকেল ৪টার আগে কোনো হকার বসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৪টার পর থেকে রাত পর্যন্ত হকাররা ব্যবসা করতে পারবেন, তবে কোনো স্থায়ী কাঠামো বা দোকান স্থাপন করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘হকাররা যদি চাকাযুক্ত গাড়ি বা হাতে করে পণ্য এনে বিক্রি করেন, তা নিয়ে সমস্যা নেই। তবে কেউ স্থায়ী অবকাঠামো করলে বা পথচারী ও যাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটালে সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছেদ করা হবে। ব্যবসা শেষে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার দায়িত্বও তাদের।’
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোয়েব উদ্দিন খান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশসহ পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা।
অভিযানের সময় হকারদের প্রতিবাদঃ
মেয়রের নেতৃত্বে যখন উচ্ছেদ অভিযান চলছিল, তখন সামান্য দূরত্বেই (প্রায় ৪-৫ গজ ব্যবধানে) হকাররা সমবেত হয়ে শ্লোগান দিতে শুরু করেন— “মেয়রের ঘোষণা, হকার উচ্ছেদ চলবে না।”
এ দৃশ্য দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল দেখা দেয়, এই অভিযান আসলে কতটা কার্যকর হবে? অনেকে প্রশ্ন তোলেন, শুধু নিউ মার্কেট এলাকা নয়, নগরীর অন্যান্য সড়ক ও ফুটপাতে হকার বসার নিয়ম কী হবে?
নিয়ম জারি, বাস্তবায়ন অনিশ্চিতঃ
চট্টগ্রাম সিটিতে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, কয়েকদিনের মধ্যেই হকাররা পুনরায় আগের জায়গায় বসে পড়েন। ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দুই-তিন সারি পর্যন্ত দোকান বসিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, ‘নগরীর প্রায় সব এলাকায় হকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি অঘোষিত সিন্ডিকেট কাজ করছে। এতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, হকার সংগঠনের নেতা এবং কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য নিয়মিত অর্থনৈতিক লেনদেনে জড়িত। ফলে প্রশাসনের নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবে কার্যকর হয় না।’
যানজটে নিত্যদিনের দুর্ভোগ:
চট্টগ্রাম নগরীর যানজট এখন নাগরিক জীবনের নিত্য সমস্যা। বিশেষ করে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
ইপিজেড থেকে আগ্রাবাদ, বাদামতলী, মাঝিরঘাট, মাদারবাড়ী, স্টেশন রোড, নিউ মার্কেট মোড়, লালদীঘি, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম কলেজ গেট, গোলজার মোড়, মেডিকেল এলাকা, শাহ আমানত সেতুর শহর প্রান্ত, মুরাদপুর, ষোলশহর, জিইসি মোড়— সর্বত্রই একই চিত্র।
যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে ফুটপাত ও সড়কে হকারদের দখল, পণ্য রাখার স্টল এবং অবাধ পার্কিংকেই দায়ী করছেন নগরবাসী।
সুশীল সমাজের দাবি: টেকসই পরিকল্পনা প্রয়োজন
সুশীল সমাজ ও নাগরিক অধিকারকর্মীরা বলছেন, মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সমাধান আসবে না। হকারদের জন্য নির্দিষ্ট সময় ও স্থানের পরিকল্পনা এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তারা বলেন, ‘নগরীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে হকারদের পুনর্বাসন, বিকল্প বাজার ব্যবস্থা এবং সড়ক ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি বিষয়ের সমন্বিত বাস্তবায়ন জরুরি।’
শেষ কথা
চট্টগ্রামের জনজীবনে স্বস্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হলে মাঝে মাঝে উচ্ছেদ নয়, বরং সুসংহত পরিকল্পনা, কার্যকর বাস্তবায়ন ও প্রশাসনিক দৃঢ়তা অপরিহার্য— এমনটাই মত নগরবাসীর।
