May 19, 2024, 12:15 pm
সর্বশেষ:
রামপালে ৬৩০ জন রোগী পেল বিনামূল্যে ছানি অপারেশনের সুযোগ  চাল বিতরণে অনিয়মের দায়ে ইউপি সদস্য বরখাস্ত মোরেলগঞ্জের পোলেরহাট বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, ১৩ দোকান পুড়ে ছাই মৌলভীবাজারে নদী রক্ষার বাঁধ নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতা ৬ তারিখে বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো: প্রধানমন্ত্রী বেনাপোলে দোয়াত কলম প্রতীকের নির্বাচনী গণসমাবেশ দেশজুড়ে আজ থেকে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যকর বিমানের সাবেক এমডিসহ ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট সরকারের জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি হ্রাস করেছে : প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আড়াই বছর পর বিজয়ী হলেন পরাজিত প্রার্থী

  • Last update: Wednesday, February 21, 2024

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু কিছু পরিবার হঠাৎ টাকার মালিক হয়ে গেছে, তারা মনে করে ইংরেজি ভাষায় কথা বললেই স্মার্টনেস।

বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ টাকা-পয়সা হয়ে গেলে কিছু মানুষ ইংরেজিতে কথা বলাকে স্মার্টনেস ভাবেন।স্মার্ট হতে গেলে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে, তা ঠিক নয়। তবে কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে অনেক ভাষা শেখা দরকার। শিক্ষার মাধ্যমটা মাতৃভাষায় হওয়া উচিত, তার সঙ্গে শিশুদের আরও দুই-তিনটি ভাষা শেখানোর দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, ছয় হাজার বিদেশি শব্দ রয়েছে, যেটা সহজে গ্রহণ করা যায়। কিন্তু স্মার্ট হতে হলে শুধুমাত্র একটা ভাষা শিখতে হবে এবং সে ভাষায় কথা বলতে হবে, আমি সেটা বিশ্বাস করি না। নিজের ভাষা শিখে অন্যের ভাষাও শেখা যায়।

তিনি বলেন, আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি জাতি নিজের মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য মহান আত্মত্যাগ করেছে। মাতৃভাষা রক্ষায় যারা আত্মত্যাগ করেছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বাঙালি জাতি রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা দিয়ে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভাষা ও সাহিত্য নিয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এবং বাংলা একাডেমিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে হবে। আমরা সেটাই চাই।

তিনি বলেন, ভাষার ওপর পড়াশোনা করলে অনেক মানুষ ও জাতি সম্পর্কে জানা যায়। যেহেতু আমরা মাতৃভাষা রক্ষায় রক্ত দিয়ে পথ দেখিয়েছি, তাই সারাবিশ্বের মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও গবেষণায়ও জোর দিতে হবে। এক সময় বলা হতো অন্য ভাষা থেকে অনুবাদ করার দরকার নেই। আমি মনে করি এটা দরকার। বিভিন্ন দেশের সাহিত্য ও ইতিহাস অনুবাদ করে আমাদের ছেলে-মেয়েদের দেওয়া দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের ডিজিটাল যুগ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সেও বাংলা ভাষা ঢুকে যাবে, এসে গেছে, ব্যবহার হচ্ছে। প্রযুক্তি যত আসবে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ভাষাটাকেও সেই ভাবে সামঞ্জস্য করে এগিয়ে যেতে হবে। এখন ডিজিটাল ডিভাইস অনুবাদ করতে গিয়ে এমন কিছু লিখে ফেলে, শেষে তার অর্থই খুঁজে পাওয়া যায় না। এই বিষয়গুলো তো নজর দেওয়া দরকার। অনুবাদ করতে গিয়ে আমাদের ভাষাটাকে বিকৃত করা হয়। ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে অনুবাদ করার পর দেখা উচিত, সেটা ঠিকমতো হলো কি না। ভুল হলে সংশোধন করে বাজারজাত করা উচিত।

তিনি বলেন, মাতৃভাষার ধ্বনি সারাবিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অনেকে এ নিয়ে লজ্জা পেয়ে যান, ভুল হলো কি না। আমি সেটা মনে করি না। লজ্জা পাই না। ভুল নিয়ে আমি চিন্তা করি না। আমি মনে করি, আমি আমার মতো করে আমার কথাটা বুঝাতে পারলাম কি না। ভুল হলো কি না- এই চিন্তায় আমরা অনেক সময় কথাই বলতে পারি না। এটা কিন্তু ঠিক না। আমি নিজেও শুধু বাংলাটাই ভালোভাবে পারি। আমি বাংলা সাহিত্যে পড়েছি। ইংরেজি ভালো করে পারতাম না।

শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভাষা জানার ফলে নিজের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানা যায়। তবে কর্মক্ষেত্রের জন্য একাধিক ভাষা শিখতে হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী। তারা একাধিক ভাষা শিখতে পারে। আমি মনে করি, আমাদের মাতৃভাষা শিক্ষার মাধ্যম থাকবে। তবে অন্যান্য ভাষা শিক্ষারও সুযোগ থাকতে হবে। কিছু কিছু পরিবার হঠাৎ টাকার মালিক হয়ে গেছে, তারা মনে করে ইংরেজি ভাষায় কথা বললেই স্মার্ট। অনেকে দেশি ভাষা পরিত্যাগ করার মতো অবস্থায় চলে যায়। কিন্তু শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে অসুবিধে কী?

তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করেছিল। কিন্তু এখন আর সেদিন নেই। এখন মানুষ সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। শুধু ইতিহাস নয়, ভাষারও বিকৃতি শুরু হয়েছিল। আরবি ভাষায় বাংলা লিখতে হবে, পরে আবার ল্যাটিন ভাষায় বাংলা লিখতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত এসেছিল। আমাদের ছেলে-মেয়েরা সেটারও প্রতিবাদ করেছিল।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে সরিয়ে ভিন্ন ধারা পরিচালনার চেষ্টা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সেটা থেকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা পৃথিবীর মাতৃভাষা যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। এটি ইউনেসকো কর্তৃক ক্যাটাগরি টু-তে উন্নীত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাতৃভাষার আন্দোলন শুরু হয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার আইন বিভাগের ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উদ্যোগ নেন। তিনি ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলেন, ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। আরও কয়েকটি প্রগতিশীল সংগঠনকে নিয়ে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার উদ্যোগের ফলে এবং তার নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা আমাদের স্বাধিকার পেয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশ হচ্ছে একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা এই মর্যাদা অর্জন করেছি।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. হাকিম আরিফ।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ
© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC