March 28, 2024, 4:37 pm

৭৩ বছর বয়সী বৃদ্ধা স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন

  • Last update: Sunday, August 8, 2021

এক হাতে লাল অন্য হাতে সবুজ রঙের পতাকা আর মুখে বাঁশি নিয়ে রাস্তার দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন ৭৩ বছর বয়সী সোনা উল্ল্যাহ। লাল রঙের পতাকা উঁচিয়ে থামিয়ে দেন অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি, আর সবুজ রঙের পতাকা উঁচিয়ে অনুমতি দেন চলার।

রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হলে ছুটে যান এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। বাঁশি বাজিয়ে নির্দেশ দেন যান চলাচল স্বাভাবিক করতে। আর এই কাজটি তিনি করেন স্বেচ্ছাশ্রমে।

প্রায় সাত বছর ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ব্যস্ততম চৌরাস্তা মোড়ে এভাবেই স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন সোনা উল্ল্যাহ।

সোনা উল্ল্যাহর বাড়ি রাজারহাট উপজেলার পুটিকাটা মাল্লিরপাড় গ্রামে। জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রায় ৪৫ বছর ধরে রিকশা চালিয়েছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এরপর বয়সের সঙ্গে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে রিকশা চালানো ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে যান। সেখানে কিছুদিন বসে থাকার পর স্বেচ্ছাশ্রমে রাজারহাট শহরের ব্যস্ততম চৌরাস্তা মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেন।

ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কাজ করেন সোনা উল্ল্যাহ। সবসময় হাসি-খুশি থাকা সোনা উল্ল্যাহর কাজে সন্তুষ্ট গাড়িচালক ও স্থানীয়রা। কাজের বিনিময়ে তিনি কোনো দপ্তর থেকে ভাতা বা মজুরি পান না। তবে, ট্রাক চালকরা খুশি হয়ে তাকে পাঁচ-দশ টাকা দেন। এভাবে তার প্রতিদিন ১২০-১৫০ টাকা রোজগার হয়। তাই দিয়ে চলে সংসার। বাড়িয়ে আছেন স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৭)। তার দুই ছেলে আলাদা থাকেন। তারও শ্রমিকের কাজ করে কোনোমতে নিজেদের সংসার চালান। সোনা উল্ল্যাহর নিজস্ব সম্পদ বলতে রয়েছে মাত্র দুই শতক জমি আর একটি ছোট টিনের ঘর।

সোনা উল্ল্যাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সারাজীবন রিকশা চালিয়ে কোনো সম্পদ করতে পারিনি। রিকশা চালানোর মতো শক্তি আর শরীরে নেই। তাই, স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিকের কাজ করছি। ট্রাক চালকরা খুশি হয়ে যা দেন, তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। রাস্তার ওপর থাকছি, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি, এতেই আমার খুশি এবং আমি সুস্থ আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের জন্য কোথাও ছুটে যাই না। আমার ও আমার স্ত্রীর সরকারি বয়স্ক ভাতা পাওয়ার বয়স হলেও এখনো এই সুবিধা পাইনি। তবে, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একমাস আগে আমাদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র নিয়েছেন।’

সোনা উল্ল্যাহর স্ত্রী নুরজাহান বেগম ডেইলি স্টারকে জানান, বুড়া মানুষ কষ্ট করে সামান্য আয় করেন। তাই দিয়ে খুব কষ্টে তাদের সংসার চলে। মাছ-মাংস খাওয়ার ইচ্ছা জাগলেও জোটাতে পারে না। বুড়া মানুষের কষ্ট তিনি সহ্য করতে না পারলেও তিনি নিরুপায়।

রাজারহাটে চৌরাস্তা মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আবুল কালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের কাজে সোনা উল্ল্যাহ খুব সহযোগিতা করেন। তিনি রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকেন, প্রয়োজনে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছুটে যান। আমরা তাকে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করে থাকি।’

ট্রাকচালক নুর জামাল (৪৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা সোনা উল্ল্যাহকে ৫-১০ টাকা করে বকশিস দেই। চৌরাস্তা মোড়ে তিনি ট্রাক চালকদের ট্রাক চলাচলে সহায়তা করেন। ব্যস্ততম এলাকাটিকে তিনি সবসময় যানজটমুক্ত রাখেন।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী বিকাশ চন্দ্র রায় তরুণ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘৭৩ বছর বয়সেও সোনা উল্ল্যাহ স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিকের কাজ করে ব্যস্ততম সড়কটি যানজটমুক্ত রাখছেন। এতে পথচারীরাও উপকৃত হচ্ছেন।’

রাজারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সোনা উল্ল্যাহ ও তার স্ত্রী নুরজাহান বেগমকে বয়স্ক ভাতা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে আবেদনও সম্পন্ন হয়েছে। এ বছরই তারা এ সুবিধার আওতায় আসবেন। সোনা উল্ল্যাহর স্বেচ্ছাশ্রমে রাজারহাট উপজেলাবাসী উপকৃত হচ্ছেন।’

এ ছাড়া সোনা উল্ল্যাহকে কখনেও কোনো সরকারি ত্রাণের জন্য তার কাছে যেতে দেখেননি বলেও জানান চেয়ারম্যান এনামুল হক।

স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিকের কাজ করা সোনা উল্ল্যাহর স্বপ্ন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার কাজটি করে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দুমুঠো খেয়ে-পরে বাঁচা।

উৎসঃ ডেইলি স্টার

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ
© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC