৪ উইকেটের জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ

চট্টগ্রামের আলো–হাওয়াকে যেন নতুন প্রাণ দিল শেষ ওভারের উত্তেজনা। ম্যাচজুড়ে দোলাচলে দুলতে থাকা লড়াই শেষ পর্যন্ত থিতু হলো বাংলাদেশের দিকেই। শেষ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৩ রান—কিন্তু মাঠজুড়ে তখনও চাপের গন্ধ। সেখান থেকেই মেহেদী হাসানের শান্ত ব্যাটে আসা বাউন্ডারি নিশ্চিত করল স্বস্তির জয়, আর সিরিজকে ঠেলে দিল সমতার মঞ্চে। তৃতীয় টি–টোয়েন্টি এখন কার্যত হয়ে গেল ‘ফাইনাল’।

লিটনের ফিফটিতে জয়ের দিকে এগোতে থাকা বাংলাদেশ হঠাৎই ১৮তম ওভারে তাওহীদ হৃদয়ের রানআউটের পর ম্যাচে আবার ঢুকে পড়ে আয়ারল্যান্ড। নুরুল হাসানের আউট হওয়ার পর তো হিসাব আরও জটিল—১০ বলে দরকার ছিল ১৪ রান।

ঠিক তখনই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ টেনে ধরেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মার্ক অ্যাডাইরের করা ১৯তম ওভারের শেষ তিন বলে চার–ছক্কা—এক ওভারেই ১০ রান তুলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন তিনি। তাতে শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে মাত্র ৩ রানের।

জশ লিটলের করা ওভারে প্রথম তিন বলেই আসে ২ রান। এরপর চতুর্থ বলটি শরীরের পাশে পেয়েই স্কোয়ার লেগ দিয়ে চার—ম্যাচ শেষ। ২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ইতিহাস নয়, দায়িত্ববোধই লিখল বাংলাদেশের জয়ের গল্প। এর আগে ১৭১ রানের তাড়া করতে নেমে শুরুটাও হয়েছিল আগ্রাসী। তানজিদ দ্রুত রানআউট হলেও লিটন দাস ও পারভেজ হোসেন দাঁড়িয়ে যান দারুণ ছন্দে। পাওয়ার প্লেতে আসে ৬৬ রান। পারভেজ খেলেন ২৮ বলে ৪৩ রানের ঝলমলে ইনিংস।

লিটন দাস ৩৭ বলে ৫৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে দলকে এগিয়ে নেন, যা আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে তার ১৬তম ফিফটি। তবে ১৪০ রানে লিটন ও সাইফ হাসান (১৭ বলে ২২) বিদায় নিলে ম্যাচে আবার চাপ ফেরে। নুরুল–হৃদয়ও বড় কিছু করতে পারেননি। কিন্তু শেষ কথাটি বলেছিলেন সাইফউদ্দিন–মেহেদী।

এর আগে ব্যাট হাতে আয়ারল্যান্ড ঝড়ো শুরু করেছিল। পাওয়ার প্লেতে তারা তোলে ৭৫ রান। কিন্তু এরপরই মেহেদী হাসানের শৃঙ্খলাপরায়ণ অফস্পিন থামিয়ে দেয় আইরিশদের গতি।

টেক্টর ভাইদের পরপর বিদায় করেই তিনি ম্যাচের মোড় বদলে দেন। তানজিম হাসান শক্তিশালী স্পেলে ৩ ওভারে দেন মাত্র ১৭ রান, নেন এক উইকেট।

লোরকান টাকার ৩২ বলে ৪১ রান করে দলকে ১৭০ রানে পৌঁছে দিলেও শেষ দিকে বাংলাদেশের বোলারদের শৃঙ্খলা আয়ারল্যান্ডকে বড় স্কোর করতে দেয়নি।

৪ উইকেটের এই জয়ে বাংলাদেশ সিরিজে ১–১ সমতায় ফিরেছে। এখন তৃতীয় ম্যাচটিই নির্ধারণ করবে সিরিজ কার হাতে যাবে।

চট্টগ্রামের কাগজে–কলমে এটি শুধু একটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচ ছিল, কিন্তু মাঠে দেখা গেল তার চেয়ে অনেক বেশি—চাপ, জবাব, প্রত্যাবর্তন আর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস। পরের ম্যাচে এই আত্মবিশ্বাসই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি।

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *