March 28, 2024, 5:40 pm

হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

  • Last update: Sunday, July 18, 2021

মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকীঃ হজ ইসলামের অবশ্য করণীয় বিধানসমূহের একটি। কোরআনে কারিমের বহু আয়াত এবং অসংখ্য হাদিসের মাধ্যমে হজের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে হিজরি তৃতীয় বছর সুরা আলে ইমরানের একটি আয়াতের মাধ্যমে হজ ফরজ করা হয়। ইবনে কাসির

হজ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যারা শরিয়তসম্মত অপারগতা ছাড়া পার্থিব স্বার্থ ও অলসতাবশত হজপালন করে না, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সম্পর্কে অত্যন্ত মন্দ পরিণতির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ইসলামের বিধান হলো, শরিয়তসম্মত কারণে যদি কারও হজে যেতে দেরি হয় এবং নিজে হজ করার ব্যাপারে আশা না থাকে, তাহলে (মৃত্যুর আগে) বদলি হজের অসিয়ত অবশ্যই করতে হবে। আর যে ব্যক্তি অলসতা বা অন্য কোনো বাহানা করে দেরি করল এবং মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে গেল, তাকেও বদলি হজের অসিয়ত করে যেতে হবে এবং তওবা করতে হবে। তাতে হয়তো আল্লাহ মাফ করতে পারেন।

হজ নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রাচীন যুগ থেকে মানুষ হজপালন করে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে গিয়ে সর্বপ্রথম হজরত আদম (আ.) হজপালন করেন। সে সময় হজরত জিবরাইল (আ.) বলেছিলেন, আপনার আগমনের সাত হাজার বছর আগে থেকে ফেরেশতাদের জামাত বায়তুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ করে আসছে। গোটা পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র ভারতবর্ষই এ অনুপম গৌরব বহন করছে যে, প্রথম হজ ভারতবর্ষ থেকে করা হয়েছে। নবী রাসুলরাও হজ আদায় করেছিলেন। কেবল হজরত হুদ (আ.) এবং হজরত সালেহ (আ.) হজ আদায় করতে পারেননি। জাহেলিয়াত যুগেও মানুষ হজপালন করত। তবে তারা ভ্রান্ত চিন্তাধারার আলোকে অহংকার ও মূর্খতাজনিত কিছু বিষয় হজের বিধানের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিল। শরিয়ত মুহাম্মদিতে এসবের সংস্কার ও সংশোধন করা হয়েছে। এতে প্রকৃত ইবাদতকে অক্ষুণœ রাখা হয়েছে, যেন অতিপ্রাচীন এ ইবাদতটি স্থায়ীত্ব লাভ করে এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহের সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশ পেতে থাকে।

হজের বহু ফজিলত ও উপকারিতা রয়েছে। এ সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘মাকবুল হজের একমাত্র প্রতিদান হলো বেহেশত।’ সহিহ্ বোখারি : ১৭৭৩

মাবরূর হজ হচ্ছে সেই হজ, যাতে কোনো গোনাহ সংঘটিত হয়নি। কারও কারও মতে, মাকবুল (কবুল) হজকেই মাবরূর হজ বলা হয়। আবার কোনো কোনো আলেমের মতে, যে হজ লোক দেখানো ও আত্মপ্রচারণা থেকে মুক্ত সেটাই মাবরূর হজ। কেউ কেউ বলেন, যে হজের পর হজ আদায়কারী আর কোনো গোনাহে লিপ্ত হয় না, সে হজকেই মাবরূর হজ বলা হয়। হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, যে হজের পর দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি জন্মে এবং আখেরাতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, সেটাই মাবরূর হজ।

হাদিস শরিফে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজপালন করবে এবং হজ সমাপনকালে স্ত্রী সহবাস কিংবা তৎসম্পর্কিত আলোচনা এবং কোনো প্রকার গোনাহের কাজে লিপ্ত হবে না, সে সদ্যজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে (বাড়ি) ফিরবে।’ সহিহ্ বোখারি : ১৫২১

বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যদি কেউ একনিষ্ঠ নিয়তে হজপালন করে এবং ইহরাম বাঁধার সময় থেকে হজের যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ বর্জন করে চলে, আর কোনো প্রকার গোনাহের কাজে লিপ্ত না হয়, তাহলে এতে তার সমস্ত পাপমোচন হয়ে যায়। তবে কবিরা গোনাহ মাফ হওয়া সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে।

হজ একটি ফরজ ইবাদত, যা পালন করা সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব। কিন্তু আল্লাহর অপার অনুগ্রহ হলো, হজপালনের কারণে শুধু মানুষকে দায়মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে তা নয়; মানুষের সব পাপও ক্ষমা করে দেওয়া হচ্ছে এবং চিরস্থায়ী আনন্দ ও সুখ দ্বারা পুরস্কৃত করা হচ্ছে। সর্বোপরি নবী কারিম (সা.) হজকারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।

আল্লাহর বিশাল অনুগ্রহ যে, তিনি একটি দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে আমাদের এত বিপুল পরিমাণ নেকি দান করেন। সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়িরা নানাবিধ কর্মব্যস্ততা সত্ত্বেও একাধিকবার হজপালন করেছেন। কেউ কেউ তো প্রত্যেক বছরই হজপালন করতেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) জীবনে ৫৫ বার হজপালন করেছিলেন। তবে অধিক পরিমাণে নফল হজপালনের ক্ষেত্রে শর্ত হলো, অন্য ফরজ পালনে যেন ত্রুটি না হয়।

হজ উপলক্ষে আরাফাতের ময়দানে হাজিরা যখন একত্রিত হয়, তখন আল্লাহতায়ালা প্রথম আকাশে এসে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলেন, ‘আমার বান্দারা দূর-দূরান্ত থেকে এলোমেলো চুল নিয়ে এসেছে, তারা রহমতের ভিখারী। হে বান্দারা! তোমাদের গোনাহ যদি জমিনের ধূলিকণা পরিমাণ হয় কিংবা সমুদ্রের ফেনারাশি বরাবর হয় তবুও তা আমি মাফ করে দিলাম। প্রিয় বান্দারা! ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে তোমরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাও।’

হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! নারীদের জন্য কি জেহাদ আছে? তিনি উত্তরে বললেন, তাদের জন্য জেহাদ আছে, তবে তাতে যুদ্ধ নেই, আর তা হলো ‘হজ ও ওমরাহ।’ ইবনে মাজাহ : ২৯০১

হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য এক হাদিসে আছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিন অপেক্ষা আর কোনোদিন আল্লাহতায়ালা তার এত বেশি বান্দাকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন না।’ সহিহ্ মুসলিম : ৩৩৫৪

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ
© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC