March 28, 2024, 7:01 pm

সৌদিতে চাকুরী হারাচ্ছেন ৫-১০ লাখ বাংলাদেশি!

  • Last update: Sunday, May 3, 2020

দূতাবাসের রিপোর্টঃ করোনার চেয়ে ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসী শ্রমিকরা। মধ্যপ্রাচ্যের বড় ওই শ্রমবাজারে প্রায় ২২-২৫ লাখ বাংলাদেশির বাস, যাদের ৮৫ ভাগই বৈধ। তাদের বতাকা বা পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট রয়েছে। তারা নিয়মিত এবং বেশ ভাল বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু আচমকা সৌদি সরকারের নিজেদের নাগরিকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতে নেয়া সৌদিকরণের সিদ্ধান্তে আজ বিদেশি শ্রমিকদের গণহারে ছাঁটাইর আশঙ্কায় দেখা দিয়েছে! সৌদিকরণের এ সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন না এলে (চূড়ান্ত পর্যায়ে) নূন্যতম কী পরিমাণ বাংলাদেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন? তার একটি অনুমান সংক্রান্ত রিপোর্ট ঢাকায় পাঠিয়েছে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। ওই রিপোর্টে ধারণা দেয়া হয়েছে- আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৫ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন। দূতাবাসের রিপোর্টে বিস্তারিত জানিয়ে বলা হয়েছে, সৌদিকরণের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভিশন- ২০৩০ ঘোষণা করেছে রিয়াদ। যেখানে বলা হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে দেশটির চাকরির বাজারের ৭০ শতাংশ নাগরিকেদের অধিকারে নিতে হবে। এ জন্য ধীরে ধীরে ওই বাজার থেকে বিদেশি বা অভিবাসী শ্রমিকের বিদায় করতে হবে।

সৌদি আরব সরকার গৃহীত ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়ের প্রক্রিয়া গেল বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জানিয়ে বলা হয়- করোনার কারণে এটি থমকে গেছে। তবে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার পরপরই এটি ফের শুরু হবে এতে কোনো সংশয় নেই। আর আগামী ৩-৫ বছরের মধ্যে ভিশন ‘৩০ র উল্লেখযোগ্য অংশ বাস্তবায়ন হবে। ওই সময়ে সৌদিজুড়ে থাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের মতই বাংলাদেশিরা চাকরিচ্যুতির ঝুঁকিতে পড়বেন। রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ সৌদি শ্রমবাজারে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা সংক্রান্ত রিপোর্ট ঢাকায় পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে রাষ্ট্রদূত দাবি করেন, যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে ঘটনা তা নয়। সৌদিকরণের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে করোনার কোনো সংযোগ নেই। তাছাড়া এটা ওভারনাইট হয়ে যাচ্ছে, তা-ও নয়। সৌদি সরকার বাংলাদেশিদের টার্গেট করে চাকরিচ্যুত করছে এবং দেশে ফেরতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিষয়টি এমনও নয়। মূল কথা হচ্ছে তারা বিদেশি শ্রমিক কমিয়ে চাকরির বাজারে নিজেদের লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চায়। মোট চাকরির ৭০ ভাগ পর্যন্ত সৌদি নাগরিকদের নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকান এবং পর্যায়ক্রমে তারা তা বাস্তবায়ন করছে। রাষ্ট্রদূত এ-ও বলেন, এখনই তাদের ফেরানোর কোনো চাপ নেই।

রাষ্ট্রদূত উদাহরণ দিয়ে বলেন, আগে গার্ড বা দারোয়ানের চাকরিতে সৌদি নাগরিকরা যেতেন না। হোটেলে ক্লিনিং বা বলদিয়ার চাকরিতে (পরিচ্ছন্নতা কর্মী) তারা যেতেন কম। এখন দারোয়ান, ক্লিনারের কাজেও তারা বেশ যাচ্ছেন। প্রায় শতভাগই সৌদি নাগরিকদের দখলে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশিরা ওই চাকরি থেকে ছিটকে পড়ছেন!
রাষ্ট্রদূত কোন রকম রাখঢাক না করে বলেন, বিপদ চারদিক থেকে আসছে। বৈধদের চাকরিচ্যুতির দখল সামলাতে হয়তো ৩-৫ বছর সময় মিলবে। কিন্তু দেশটিতে থাকা আড়াই থেকে ৩ লাখ আন-ডকুমেন্টেড বা অনিয়মিত বাংলাদেশি রয়েছেন। তারা হয়তো বৈধভাবেই দেশটিতে প্রবেশ করেছেন, কিন্তু কফিল বা নিয়োগকর্তার কাজ না করে অন্যত্র কাজে যাওয়াসহ নানা কারণে তারা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। করোনার এই সময়ে ওই বাংলাদেশিরা বড্ড বিপদে। তাদের বেশিরভাগেরই কাজ নেই। করোনা আসার আগে তারা মুক্তভাবে এখানে সেখানে কাজ করতেন, গাড়ি ধোয়া, ফুটফরমাশ খাটতেন। কিন্তু তারা কোনো কোম্পানী, কফিল বা নিয়োগকর্তার অধীনে ছিলেন না। যেমনটি নিয়মিত শ্রমিকদের বেলায় রয়েছে। বৈধ শ্রমিকরা যে কোম্পানীতে বা কফিলের অধীনে কাজ করেন তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানেই। অনিয়িমিতদের সেই সুবিধা নেই। ফলে তারা এখন অর্থ এবং খাদ্য কষ্টে। করোনা উত্তরণের পরপরই অনিয়মিত বা অবৈধ বাংলাদেশিদের বড় অংশকে নিজে থেকেই হয়তো দেশে ফিরতে হবে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ১২০ ডলার থেকে নেমে ২০ ডলারে এসে গেছে। এটিও মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার বড় অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কারামুক্ত ৪ শতাধিক ফেরার অপেক্ষায়

রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ জানিয়েছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের নিয়মিত ফ্লাইট যোগাযাগ বন্ধ থাকায় স্পেশাল ফ্লাইটে কারাগার বা ডিটেনশন সেন্টার থেকে মুক্ত বাংলাদেশিদের ফেরানো হচ্ছে। কয়েক’ শ ফিরেছেন। আরও ৪ শতাধিক এখন বিমানে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছেন।

সৌদিতে করোনায় ৫১ বাংলাদেশির মৃত্যু, আক্রান্ত সাড়ে ৩ হাজার

রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, সৌদিতে সরকারীভাবে করোনায় ৩৫ বাংলাদেশির মৃত্যুর কথা জানানো হলেও কমিউনিটি বা অনানুষ্ঠানিক সূত্রে ৫১ বাংলাদেশি মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছে দূতাবাস। আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি সরকারের হিসাবে ২৬০০ বাংলাদেশির করোনা শনাক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক সূত্রে এ সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজারের বেশি হবে বলে ধারণা বাংলাদেশ মিশনের।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC