April 20, 2024, 10:00 am
সর্বশেষ:
বাংলাদেশ-ইউএই কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীতে সম্পর্ক আরও বৈচিত্র্যময় করার আহ্বান গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ১৩ জুয়াড়িকে আটক মিয়ানমার থেকে আরও ১৩ বিজিবি সদস্য বাংলাদেশে বান্দরবানের রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে মোরেলগঞ্জে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত আলফাডাঙ্গায় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী- ২০২৪ উদযাপন শার্শায় সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের উপর হামলা সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী কালামের নির্বাচনী কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আমিরাতে কানাইঘাট প্রবাসী সমাজকল্যাণ পরিষদের ঈদ পুর্নমিলনী চরভদ্রাসনে শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে মায়ের মামলায় তার বাবাকে গ্রেফতার

সিসিটিভিতে মুনিয়ার বাসায় আনভীরের যাতায়াতের সত্যতা পেল পুলিশ

  • Last update: Sunday, May 2, 2021

রাজধানীর গুলশানের আলোচিত মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে পুলিশ। গুলশানের ওই বাসার মূল গেইটে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মুনিয়ার বাসায় বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াতের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

ঘটনার একদিন আগে মুনিয়া নিজেও বাসার বাইরে গিয়েছিলেন। রাতে মুনিয়া একাই ওই বাসায় প্রবেশ করেন। এসময় সন্দেহভাজন অন্য কারও যাতায়াতের তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজের প্রতিটি সেকেন্ড বিশ্লেষণ করছি। ফুটেজে অনেক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মামলার তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণে এগুলো কাজে লাগবে।’

গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন বাদি হয়ে গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে।

ঘটনার দিন বের হয়নি মুনিয়া

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাসার সামনের গেটের সিসিটিভি ফুটেজে তারা ঘটনার আগের দিন রাতে স্বাভাবিকভাবেই মুনিয়াকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরতে দেখেন। তবে ঘটনার দিন মুনিয়া বাসা থেকে বের হয়নি। বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে সর্বশেষ ২০ এপ্রিল বিকালে ওই অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করতে এবং বের হয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ কর্মকর্তারা ফুটেজের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করতে চাননি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ছাড়াও মুনিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষা করিয়ে তার সঙ্গে সায়েম সোবহান আনভীরের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে। ঠিক কী কারণে তাদের মধ্যে ‘ঝামেলা’ হয়েছিল এবং ভিকটিমকে মোবাইলে ফোনে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে কী ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।

এ ছাড়া মুনিয়ার ব্যবহৃত ছয়টি ডায়েরিতে সায়েম সোবহান আনভীরকে উদ্দেশ্য করে লেখা অভিমান ও হতাশার কথাগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

মামলার এজাহারে মুনিয়ার বড় বোন অভিযোগ করেছেন, বসুন্ধরার এমডির সঙ্গে তার বোন মুনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গুলশানের বাসাটি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে মাসিক এক লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া হলেও এর ভাড়া পরিশোধ করতেন আনভীর। ফেসবুকে একটি ছবি আপলোড করাকে কেন্দ্র করে সায়েম সোবহান আনভীর তার বোনের (মুনিয়া) ওপর ক্ষুব্ধ হয়। আনভীরের প্ররোচনায় তার বোন আত্মহত্যা করেছে বলে তিনি মামলায় অভিযোগ করেন।

সুরতহালে যা আছে

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার দিন গুলশানে মুনিয়ার বাসায় প্রথম যান তার বড় বোন নুসরাত জাহান ও তার দুই স্বজন। মামলার এজাহারে তারা এই ঘটনার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সকালে মুনিয়া তার বড় বোনকে দ্রুত ঢাকায় আসতে বলে। সকাল নয়টার দিকে একবার ও পরে এগারোটার দিকে তার সর্বশেষ কথা হয়। এরপর থেকে নুসরাত তার একাধিকবার মোবাইলে কল দিলেও মুনিয়া তা রিসিভ করেনি।

নুসরাত জানান, ২৬ এপ্রিল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে তারা গুলশানের ওই বাসায় পৌঁছান। বাইরে থেকে একাধিকবার কলিং বেল বাজালেও ভেতর থেকে কোনও সাড়া পাননি। পরে তিনি নিচের কেয়ারটেকারের মাধ্যমে বাসার ইন্টারকম টেলিফোনে ফোন করেও সাড়া পাননি। বিষয়টি ফ্ল্যাট মালিককে জানালে তার পরামর্শে মিস্ত্রি ডেকে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা।

নুসরাত বলেন, ‘ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে শয়নকক্ষে মুনিয়াকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখি। এ সময় তার পা দুটো বিছানার সঙ্গে কিছুটা ভাঁজ করা ছিল। মামলার এজাহারে আত্মহত্যায় প্ররোচনার কথা উল্লেখ করেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তাকে হত্যার পর লাশ সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে।’

গুলশান থানা পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই বাসা থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করেন। এরপর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন। সুরতহাল প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, জান্নাতুল ফেরদৌস নামে একজন নারী কনস্টেবল ও ভিকটিমের বোন নুসরাত জাহানসহ উপস্থিত স্বাক্ষীদের সামনে তিনি সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা মুনিয়ার লাশ নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেন। উদ্ধারের সময় লাশের নাক ও কান স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। চোখ দুটি বন্ধ ছিল। জিব আধা ইঞ্চি বাইরে বের করা এবং দাঁত দিয়ে কামড়ানো অবস্থায় ছিল।

সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, লাশ উদ্ধারের সময় জিহ্বা দিয়ে সামান্য লালা বের হতে দেখা গিয়েছে। গলার বাম দিকে অর্ধাচন্দ্রাকৃতি গভীর কালোদাগ ছিল। হাত দুটি শরীরের সঙ্গে লম্বা অবস্থায় অর্ধেক মুষ্ঠিবদ্ধ অবস্থায় ছিল। সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশ আরও বলছে, একজন নারী কনস্টেবল ও মুনিয়ার বড় বোন নুসরাতের মাধ্যমে মৃতদেহ ওলট-পালট করে বুক, পেট ও পিঠ স্বাভাবিক দেখতে পাওয়া যায়। দুই পা লম্বালম্বি অবস্থায় ও পায়ের আঙুল নিম্নমুখী অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া মৃতদেহের যৌনাঙ্গ দিয়ে লালচে রঙের পদার্থ নির্গত হতে দেখা গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ভিকটিম ধর্ষিত হয়েছেন কি না, ধর্ষিত হয়ে থাকলে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ বা ভিকটিমকে কোনও প্রকার বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কি না তা নির্ণয়ের জন্য ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, ‘বিষয়টি সেনসেটিভি। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলেও পুরোপুরি মন্তব্য করার সময় আসেনি। ডিএনএ নমুনা ও ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এগুলো পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা- সিআইডি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এসব প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে। আগামীকাল (৩ মে) শুধু ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধ্যান অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘সোমবার প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশের কাছে দেওয়া হবে। প্রতিবেদনে কী রয়েছে এটা আমার বলা সমীচিন হবে না। তদন্ত সংশ্লিষ্টরাই বলবেন।’

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা বলছেন, প্রাথমিকভাবে তারা ঘটনটি আত্মহত্যা বলে নিশ্চিত হয়েছেন। হত্যার পর কেউ লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখলে শরীরে আরও ইনজুরি দেখা যেত। এ ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজেও ওই বাসায় ঘটনার দিন সন্দেহভাজন কাউকে যাতায়াত করতে দেখা যায়নি। তারা আত্মহত্যার প্ররোচনার তথ্য-উপাত্ত প্রমাণের জন্য অনুসন্ধান করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC