April 19, 2024, 5:31 pm
সর্বশেষ:
বাংলাদেশ-ইউএই কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীতে সম্পর্ক আরও বৈচিত্র্যময় করার আহ্বান গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ১৩ জুয়াড়িকে আটক মিয়ানমার থেকে আরও ১৩ বিজিবি সদস্য বাংলাদেশে বান্দরবানের রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে মোরেলগঞ্জে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত আলফাডাঙ্গায় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী- ২০২৪ উদযাপন শার্শায় সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের উপর হামলা সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী কালামের নির্বাচনী কর্মীসভা অনুষ্ঠিত আমিরাতে কানাইঘাট প্রবাসী সমাজকল্যাণ পরিষদের ঈদ পুর্নমিলনী চরভদ্রাসনে শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে মায়ের মামলায় তার বাবাকে গ্রেফতার

সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা চা শ্রমিকদের

  • Last update: Friday, August 12, 2022

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিত টানা ৪ দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছেন চা শ্রমিকরা। তার পরেও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।

বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশের চা বাগানে কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা। মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মৌলভীবাজারের ৯২টি, হবিগঞ্জের ২৪টি, সিলেটের ২৩টি বাগানসহ সারাদেশের ২৪১টি বাগানের শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু এই চার দিন কর্মবিরতি পালন করেও কোন ফলাফল না পাওয়ায় আগামিকাল শনিবার চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য সারাদেশের সব চা বাগানে কর্মবিরতি করে মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন সর্বস্তরের চা-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

আগামিকাল থেকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, বড়লেখা উপজেলার সবকটি চা বাগানসহ সারাদেশে একযোগে অনিদির্ষ্ট কালের এই কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।

শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা-বাগানে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা এ ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তিন দিন ধরে চট্রগ্রাম, সিলেটসহ সারা দেশের চা-বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি করছেন চা-শ্রমিকেরা।

বিজয় হাজরা বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আমরা তিন দিন নাগাদার সারাদেশে চা–বাগানে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করছি। কিন্তু আমাদের কর্মবিরতিকে মালিকপক্ষ কোনো প্রকার গুরুত্বই দিচ্ছে না। কাল দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির শেষ দিন। আপনারা প্রতিটি চা-বাগানে প্রস্তুতি নিন। যদি কালকের ভেতর কোনো আশানুরূপ সমাধান না আসে, তাহলে প্রতিটি চা-বাগানের শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে নিকটস্থ শহরের মহাসড়কে অবস্থান করুন। প্রতিটি চা-বাগানে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলুন।’

এ সময় সেখানে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, ভাড়াউড়া বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি নুর মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

চা-শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বিজয় প্রতিনিধিকে বলেন, ‘১৯ মাস ধরে আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছি। ১৩টি সভা হয়েছে তাদের সঙ্গে। মালিকপক্ষ আমাদের শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার সঙ্গে ১৪ টাকা বাড়াতে চায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ১৩৪ টাকা দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব। প্রতিটি চা-শ্রমিকের পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। আমরা মালিকপক্ষের কাছে দাবি রেখেছি আমাদের মজুরি ৩০০ টাকা করা হোক।’

এদিকে কর্মসূচির চতুর্থ দিনেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে চা বাগান কেন্দ্রিক চট্রগ্রামসসহ সিলেটের চা-শ্রমিকেরা সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন।
উপজেলার ভুরভুরিয়া চা-বাগানের নারী চা-শ্রমিক সরস্বতি পাল বলেন, ১২০ টাকার মজুরি দিয়ে ৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। কোনোদিন এর চেয়ে বেশি সময়ও কাজ করতে হয়। শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু মালিকপক্ষ মজুরি ১২০ টাকা থেকে ১৪ টাকা বাড়ানোর কথা বলেছে। সন্তানদের নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জীবন যাপন করার জন্য এই দাবি জানানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কয়েকটি পত্রিকায় মালিকপক্ষের বক্তব্য দেখলাম। তারা নাকি রেশন দিচ্ছে, ঘর দিচ্ছে, অনেক সুবিধা দিচ্ছে, সাথে বলতে দেখা যায় এই আন্দোলন নাকি অযৌক্তিক। কিন্তু শ্রমিকেরা রেশনও ভালো করে পাচ্ছে না। সারাবছর শুধু লাল আটা দেওয়া হয়। একটি ঘরের কক্ষে গাদাগাদি করে শ্রমিকদের বাস করতে হয়। এখনো নিরাপদ পানি, স্যানিটেশনের অভাব রয়েছে। শুক্রবার কর্মবিরতি শেষে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে মালিকপক্ষকে বাধ্য করতে হবে। আন্দোলন এর জন্য সবাইকে প্রস্তুত হয়ে রাজপথে আহ্বান ও অনুরোধ জানান।’
এদিকে কুলাউড়া উপজেলার লোহাইনি চা বাগান ও হিংগাজিয়া চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক সংসার এই ১২০ টাকা হাজরি দিয়ে চলে। তারা চাল কিনলে লবন কিনতে পারে না। এই অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতির কারনে অনেক পরিবার অনাহারে থাকতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারছেন না। ফলে তাদের সন্তান দেশের সম্পদ না হয়ে বোঝা হচ্ছে বলে মনে করছেন।

ইটা চা বাগানের চা শ্রমিক সন্তান রুহুল আমিন বলেন ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে এখন এক লিটার তেলও মিলে না। দুই কেজি চাল কিনতেই এই টাকা চলে যায়। যাতে চা শ্রমিকদের বাঁচতে পারে এর জন্য হলেও মানবিক কারণে জীবন যুদ্ধে লড়াইয়ে বেঁচে থাকা যায় অন্তত ৩০০ টাকা মজুরি হওয়া অনেক প্রয়োজন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি (সিলেট) রাজু গোয়ালা একটি সাক্ষাৎকারে জানান, টানা চার দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করার পরেও কোন ধরনের ফলাফল পাই নাই,এর জন্য শনিবার থেকে অনিদির্ষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

Drop your comments:

Please Share This Post in Your Social Media

আরও বাংলা এক্সপ্রেস সংবাদঃ
© 2023 | Bangla Express Media | All Rights Reserved
With ❤ by Tech Baksho LLC