সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ: এস আলম গ্রুপ ও ইবি’র ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (ইবিবিএল) থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের কর্ণধারসহ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান ৬৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ গতকাল রবিবার মামলার অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যেকোনো দিন মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে। এটি দায়ের হলে দুদকের ইতিহাসে অর্থ আত্মসাতের সবচেয়ে বড় মামলা হিসেবে রেকর্ড গড়বে।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংকের সার্কুলার উপেক্ষা করে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে অননুমোদিত ঋণ গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে তারা ব্যাংক থেকে ৯,২৮৩.৯৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন, যা সুদ ও আসলে দাঁড়ায় ১০,৪৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকায়।

আসামিদের তালিকায় যাদের নাম

অনুমোদিত মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছেন— ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হাসান, সাবেক এমডি মো. মাহবুব উল আলম, আবদুল হামিদ মিয়া, ওমর ফারুক খান, মনিরুল মাওলা, সাবেক ইভিপি মিফতাহ উদ্দীন, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মতিন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া, জয়নাল আবেদীন, কাজী শহীদুল আলম, সৈয়দ আবু আসাদ, তানভীর আহমেদ, খুরশিদ-উল-আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, মোসাদ্দেক উল আলম, জাকির হোসেন, কামাল হোসেন গাজী, ফসিউল আলম, ড. সালেহ জহর, মো. সোলায়মান, মো. কামাল উদ্দিন, আলতাফ হুসাইন, হাসনে আলম, সিদ্দিকুর রহমান, জি. এম. মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের প্রমুখ।

এস আলম গ্রুপের কর্ণধারসহ আরও অনেকে

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের মালিকপক্ষ এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ হাসান, এস আলম কোল্ড রোলড স্টিলসের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সামাদ ও এমডি ওসমান গনি, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক রাশেদুল আলম, এস আলম স্টিলসের মালিক সহিদুল আলম, পরিচালক ফারজানা পারভীন, ইম্প্রেস কর্পোরেশনের মালিক মো. ইসমাইল, অ্যাপারচার ট্রেডিং হাউসের এস এম নেছার উল্লাহ, দুলারী এন্টারপ্রাইজের মো. ছাদেকুর রহমান, আহসান এন্টারপ্রাইজের মো. এহসান উদ্দীন, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী ও আনসার এন্টারপ্রাইজের আনছারুল আলম চৌধুরী এবং জেনেসিস টেক্সটাইল এক্সেসরিজ অ্যান্ড অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসানুল আলম ও পরিচালক মায়মুনা খানম রয়েছেন।

অনিয়মের নেপথ্যে পরিকল্পিত জালিয়াতি

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক ঋণের নিয়ম লঙ্ঘন, অনুমোদন জালিয়াতি ও অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন। এতে ইসলামী ব্যাংক, সাধারণ আমানতকারী ও সরকারের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের শেষের দিকে ইসলামী ব্যাংকে অস্বাভাবিক ঋণ বিতরণের ঘটনা প্রকাশ্যে এলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। পরবর্তীতে দুদক এ নিয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত মামলার অনুমোদন দেয়।

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *