তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: চা বাগান ও বনাঞ্চল অধ্যুষিত থাকায় মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জে শীতের প্রাদুর্ভাব থাকে বেশি। প্রচন্ড শীতে কাবু হয়ে পড়ছেন এ উপজেলার চা শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের পরিবার সদস্যরা। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ।
দরিদ্র পরিবার সদস্যদের মধ্যে গরম কাপড়েরও অভাব রয়েছে। স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গাছ গাছালি ও সবুজে ঘেরা থাকায় চা বাগান সমুহে সাধারণত শীত, মৃদু বাতাস ও কূয়াশাও তুলনামূলক বেশি থাকে। ফলে প্রচন্ড ঠান্ডার সময়ে কাবু হয়ে পড়েন চা শ্রমিকদের একটি বৃহদ অংশ। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে হাড় কাঁপানো শীতে তারা খুবই কষ্টে দিনযাপন করছেন। কয়েক বছর আগেও শ্রমিকদের চাহিদা অনুযায়ী বাগান কর্তৃপক্ষ শীত নিবারনে চটের বস্তা বিতরণ করলেও এখন আর কোন কিছু দেয়া হয় না। বস্তি ও চা বাগানে শীতে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
চা শ্রমিকরা জানান, স্বল্প আয় থাকায় গরম কাপড় কেনা তাদের অধিকাংশেরই সামর্থ্যের বাইরে। শীত নিবারনে এসব পরিবার সদস্যরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়খুঁটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে গরমের ভাপ লাগান।
শমশেরনগর দেওছড়া চা বাগানের নারী শ্রমিক মায়া রবিদাস ও লক্ষি রবিদাস বলেন, “চা বাগানে হামরা শরমিকদের মাত্র ১৭০ টেকা হাজরি পাই। এ টাকা থেকে কারেন্ট বিল, মন্দির চাঁদা, ইউনিয়নের চাঁদা কাটে। এরপরে হামরা সপ্তাহে ৮শ’ টেকা পেয়ে পরিবারে মধ্যে খাবার দাবার-ই করতে পারি না! হামদের সবসময়ই কষ্ঠ থাকে আর ঠান্ডায় বেশি কষ্ট হচ্ছে।”
শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক স্বপন গোয়ালা, আদরমনি মৃধা বলেন, দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে পাঁচ, সাত সদস্যের পরিবারের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আমরা চা শ্রমিকরা খাইবো কি আর কাপড় চোপড় কিনবোই বা কি? আর বাজারে জিনিসপত্রের দামও যে হারে বাড়ছে তাতে গরম কাপড় কেনা মোটেও সাধ্য নেই।
তারা আরও বলেন, শীতে খড়কুঁটো জ¦ালিয়ে ঘরের ভেতরে গরম করার চেষ্টা করি।
শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন, দেওছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি শংকর রবিদাস ও চা শ্রমিক সংঘের নেতা রাজদেও কৈরী বলেন, শীতের সময়ে চা শ্রমিকদের মধ্যে বাগান কর্তৃপক্ষ কোন শীতবস্ত্র বিতরণ করেন না। অধিকাংশ শ্রমিক পরিবার সদস্যরা শীতে কষ্ট পোহাচ্ছেন। তাছাড়া চা বাগানগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাও নাজুক। ডিসপেনসারীগুলোতে ভালো চিকিৎসা সুবিধাও নেই। সবমিলিয়ে চা শ্রমিকরা ভালো নেই।
এদিকে প্রচন্ড শীতে আর ঘন কুয়াশার মাঝে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও চরম কষ্টে বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। ১০ ডিগ্রি নিচে তাপমাত্রা থাকলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মৌলভীবাজারে তা মানা হয়নি।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, শীতের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এদের মধ্যে চা বাগানে বেশি।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।