মাদক ঝুঁকি মোকাবিলায় ফুজাইরায় যৌথ সচেতনতামূলক আয়োজন

মাদকের অপব্যবহার কেবল একজন ব্যক্তির জীবনকেই বিপর্যস্ত করে না, এটি একটি পরিবার, সমাজ এবং সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে গভীর সংকটে ফেলে। মাদকাসক্তি-সম্পর্কিত মানসিক অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতার বৃদ্ধি, শারীরিক অবক্ষয় এবং সামাজিক বিপর্যয় বর্তমানে একটি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নতুন প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখতে এবং একটি নিরাপদ সমাজ নির্মাণে মাদক প্রতিরোধ ও ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি আজ অপরিহার্য।

এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার তাদের নাগরিক ও প্রবাসীদের জন্য নিয়মিতভাবে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফুজাইরাহ কমিউনিটির কল্যাণে দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

এই ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে, সম্প্রতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফুজাইরাহ এবং ফুজাইরাহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথভাবে “মাদকাসক্তির ঝুঁকি ও সচেতনতা বৃদ্ধি” শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটির সহযোগিতায় ছিলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস দুবাই এবং ফুজাইরাহ পুলিশ।

সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. মাসুদ পারভেজ এবং পরিচালক হামাদ মোহাম্মদ ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কফিলউদ্দিন বেলাল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাইয়ের কনসাল জেনারেল মো. রশেদুজ্জামান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— ফুজাইরাহ পুলিশের ড. ফাইসাল আলি আল ইয়ামাহি, বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাইয়ের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) মো. আরিফুর রহমান, ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট ও ভিসা) দিওয়ান আকরামুল হক, সেকেন্ড সেক্রেটারি (এনআইডি) আব্দুল্লাহ আল মামুনুর রশিদ। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও কমিউনিটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ফুজাইরাহ পুলিশের বিশেষ অতিথি ড. ফাইসাল আলি আল ইয়ামাহি মাদকাসক্তির ঝুঁকি ও সচেতনতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। তার উপস্থাপনার মূল বিষয়বস্তু বাংলাতে সারসংক্ষেপ করে অংশগ্রহণকারীদের সামনে তুলে ধরেন অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মোরশেদ আলম।

এরপর ফুজাইরাহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ তারিক মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার উপায়, আচরণগত পরিবর্তন এবং লক্ষণসমূহ নিয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপন করেন।

অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আনিস এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলাল নূরের পরিচালনায় একটি মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই সেশনে অতিথি, কমিউনিটি প্রতিনিধি ও অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত, প্রশ্ন ও পরামর্শ তুলে ধরেন। বক্তারা পরিবার, সমাজ এবং তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও অন্যান্য ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে রক্ষা করতে সচেতনতা, সঠিক নির্দেশনা, শিক্ষা এবং সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ফুজাইরাহ পুলিশের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন ‘যদি কোনো ব্যক্তি মাদকাসক্ত হন এবং স্বেচ্ছায় চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেন, তবে তিনি পুলিশের কাছে আসতে পারেন। তার বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক মামলা করা হবে না। বরং তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’

প্রধান অতিথি কনসাল জেনারেল মো. রশেদুজ্জামান আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই ধরনের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের নিয়মিত আয়োজন অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা মাদকের ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করবে।

তিনি প্রবাসীদের বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেন, অনেকে অজান্তে অন্যের দেওয়া ওষুধ বা পার্সেল বহন করে বিমানবন্দরে আইনি জটিলতার মুখে পড়েন। কোনো ওষুধ বা বস্তু বহনের আগে তা বৈধ কিনা এবং বহনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি আছে কিনা-তা অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সামাজিক সচেতনতা, পারিবারিক তত্ত্বাবধান, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন যে এই ধরনের উদ্যোগ কমিউনিটির সার্বিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *