মণিপুরিদের ১৮৩ তম মহারাসলীলা উৎসব আজ

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: অপেক্ষার প্রহর শেষ, আজ অনুষ্ঠিত হবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৮৩তম মহারাসলীলা। পূর্ণিমার আলোয় মণিপুরিরা আনন্দে মাতবে। এটি তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব।

বিগত কয়েকদিন ধরে মণিপুরি পাড়াগুলো মৃদঙ্গের তালে নাচের প্রস্তুতি ও গান-বাজনার হাওয়া দিয়ে ভরে উঠেছে। গ্রাম ও পাড়া জুড়ে চলছে শেষ মুহূর্তের “গোষ্ঠলীলা” বা রাখাল নৃত্য এবং রাসনৃত্যের মহড়া।

বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসী মণিপুরি সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবের আয়োজন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দুইটি গ্রামে হচ্ছে। মাধবপুরের জোড়া মণ্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ১৮৩তম, আর আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে মীতৈ (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

স্থানীয়দের মতে, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেন। মণিপুরের বাইরে প্রথম মহারাস উৎসব কমলগঞ্জে ১৮৪২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের সকালে থাকে “গোষ্ঠলীলা” বা রাখাল নৃত্য, যা গোধূলি পর্যন্ত চলে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা হয়। রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় মূল মহারাসলীলা, যেখানে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ করে নৃত্য ও গানের মাধ্যমে রাতভর উৎসব চলে। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জন গোপী অংশ নেন।

গতকাল দুপুর ও সন্ধ্যায় কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাঝের গ্রামে মহড়া দেখতে গেলে দেখা গেছে, পাড়াগুলোতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে এখানে মহড়া চলেছে। নৃত্যশিল্পীদের রাসনৃত্যের কৌশল ও নিয়ম শিখাচ্ছেন শিক্ষক অজিত কুমার সিংহ। সঙ্গে সজল কুমার সিংহ মৃদঙ্গ বাজাচ্ছেন, আর রীনা সিংহা গান গাইছেন।

মাধবপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রিথি সিংহা বলেন, “ছোটবেলা থেকেই নাচ শিখি। রাস উৎসবে অংশ নিতে ১৫ দিন ধরে প্রতিদিন মহড়ায় অংশ নিচ্ছি। আমরা চাই সবাই আমাদের উৎসব দেখুক।” আর শিক্ষার্থী নিশা মনি সিনহা বলেন, “এটি আমাদের বড় অনুষ্ঠান। পরিবারের সমর্থন ও রাসধারীর নির্দেশে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং সংস্কৃতি তুলে ধরছি।”

শিক্ষক অজিত কুমার সিংহ জানান, “রাস উৎসবের প্রায় এক মাস আগে থেকেই মহড়া শুরু হয়। নতুন ও পুরনো দুই প্রজন্মের শিক্ষার্থীকে প্রস্তুত করা হয়। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মহড়া চলে।”

রাস নৃত্যের আরেক শিক্ষক সজল কুমার সিংহ বলেন, “আজ সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাখাল নৃত্য শুরু হবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত সাড়ে ১১টার পর মূল রাসনৃত্য শুরু হবে। দেশ-বিদেশের দর্শকরা এই উৎসব দেখতে এখানে আসে। এটি মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব।”

মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, “১৮৩তম মহারাসলীলা আজ অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি পায় এবং সকল জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকে। সবাইকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।”

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *