বেকি লেক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে 

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের পাথারিয়া চা বাগানে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বেকি লেক দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে এখনো অজানা রয়ে গেছে। বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া ঐতিহ্যবাহী চা বাগান একটি। এই বাগানের বুক চিরে বেকি লেকটি যেন প্রকৃতির এক রত্ন।

চারদিকে বিস্তীর্ণ সবুজের সমারোহে চা গাছের সারি, পাখির গুঞ্জন, বানরের খেলা, আর লেকের উপর ভেসে থাকা শাপলা ফুলে সুসজ্জিত এক অপার্থিব দৃশ্যপট, প্রতি মুহূর্তে হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের। প্রায় ২৭ একর জমিতে বিস্তৃত এই লেকের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এটিকে বিশেষায়িত করে তুলেছে। পানিতে ফুটে থাকা সাদা ও লাল শাপলা ফুল এই লেকের প্রধান আকর্ষণ।

শীতের শুরুতে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন দেখা যায়। পাশাপাশি বক, হাসপাখি, সারসবকসহ কিছু বিরল প্রজাতির পাখির আনাগোনা লেগেই থাকে বছরজুড়ে, যা পাখিপ্রেমীদের জন্য বাড়তি আনন্দের খোরাক। এছাড়াও আশপাশে রয়েছে চা শ্রমিকদের জীবনধারার চিত্র, যা পর্যটকদের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেবে। কিন্তু এমন অপার সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে পর্যটক না আসার কারণ জানতে চাইলে পাথারিয়া চা বাগানের বাসিন্দা ও চা শ্রমিকরা বলেন,‘এই লেকটা অনেক পুরনো। আগে শুধু আমরাই যেতাম, এখন বাইরে থেকে টুকটাক লোকজনও আসেন। আমরা চাই সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন একটু নজর দিক। তাহলে এখানে অনেক পর্যটক আসবে।’

স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘এই এলাকায় অনেক সুন্দর জায়গা আছে, কিন্তু প্রচার ও প্রসারের অভাবে কেউ জানেই না। যদি এই বেকি লেককে ঘিরে কিছু উন্নয়ন হয়, তাহলে বড়লেখার নাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।’

নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাহিদ নেওয়াজ বলেন, বেকি লেককে যদি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে তা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। এতে করে স্থানীয় অর্থনীতিতে যেমন চাঙ্গা হবে, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।

বেকি লেক কেন্দ্রিক পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক। এখান থেকে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি সংরক্ষিত পর্যটন এলাকা, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে পর্যটন পরিচালনা করা যাবে। এখানে নির্মাণ করা যেতে পারে একটি ছোট দর্শন টাওয়ার, যাতে পর্যটকরা লেক ও চা বাগান একসাথে উপভোগ করতে পারেন। তৈরি হতে পারে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা, যাতে পর্যটকরা ফুটে থাকা শাপলা ফুলের মাঝে ঘুরে দেখতে পারেন লেকের সৌন্দর্য। এছাড়া আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা যেতে পারে স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকান, খাদ্যকেন্দ্র এবং পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার। এতে স্থানীয় জনগণের আয়ের পথ সৃষ্টি হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। স্থানীয় তরুণরা গাইড হিসেবে কাজ করতে পারবে, গড়ে উঠতে পারে ছোট ছোট উদ্যোগ, যা বৃহৎ অর্থনৈতিক গতিশীলতা সৃষ্টি করবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

Facebook Comments Box
Share: